বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসায় পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে ‘এক ব্যক্তি কোম্পানি’ খোলার সুযোগ রেখে কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে উঠেছে।
‘কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল- ২০২০’ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
কোম্পানি আইন অনুযায়ী এখন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি পরিচালিত হয় পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। এই পর্ষদ বা বোর্ডের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
প্রস্তাবিত আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘এক ব্যক্তির কোম্পানি’ হল সেই কোম্পানি, যার বোর্ডে সদস্য থাকবেন কেবল একজন।
বিলটি সংসদে উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি এক ব্যক্তির সংজ্ঞা হিসেবে ‘একজন প্রাকৃতিক সত্তাবিশিষ্ট ব্যক্তি’ বিষয়টি স্পষ্ট করার দাবি জানান।
মন্ত্রিসভায় ব্যবসায়ীরা আছেন বলে এ আইন করা হচ্ছে কি না- সেই সন্দেহের কথাও বলেন ফখরুল ইমাম।
জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়গুলো সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে। নিজের রাজনৈতিক জীবনের কথাও তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘কারও কাছে হাত পাতবেন না’ বলেই তিনি ব্যবসা করেন।
সংসদে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের কোম্পানি আছে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার এ আইন সংশোধনের উদ্যোগে নিয়েছে।
বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতার করার প্রস্তাব পরে সংসদের কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি কোম্পানির পরিশোধিত শেয়ার মূলধন হবে অন্যূন ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক ১০ কোটি টাকা। অব্যবহিত পূর্ববর্তী অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার অন্যূন দুই কোটি টাকা এবং ১০০ কোটি টাকা হবে।
পরিশোধিত শেয়ার মূলধন এবং বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ বেশি হলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে এক ব্যক্তির কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা ক্ষেত্রমত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।
পরিচালক এবং প্রধান ব্যক্তি একজন থাকেন বলে এ ধরনের কোম্পানি পর্ষদ সভা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিয়মের ছাড় পাবে। তবে এক ব্যক্তির কোম্পানিকে বছরে কমপক্ষে একটি পরিচালক সভা করতে হবে। একমাত্র পরিচালক মারা গেলে সব শেয়ারের মালিক হবেন তার মনোনীত ব্যক্তি।
এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হস্তান্তরকারীর ব্যক্তিগত উপস্থিতি এবং কমিশনের মাধ্যমে হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। বিলে বলা হয়েছে, কোম্পানি উঠে গেলে পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
কোম্পনি আইন সংশোধন করে অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধনের বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমান আইনে ১৪ দিনের নোটিসে বোর্ড মিটিং করার বিধান আছে। প্রস্তাবিত আইনে এটাকে ২১ দিন করা প্রস্তাব করা হয়েছে।