স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের সময় আইনজীবীর উপস্থিতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের স্কুলছাত্রী জীবিত থাকার পরও তাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে মামলার শুনানিতে মৌখিকভাবে এই আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী।
নারায়ণগঞ্জে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ শিকার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নথি নিয়ে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গেলো বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সাবেক তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।
শিশির মনির সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আদালত বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে কেউ নিজের দোষ স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু এখানে যাকে কেন্দ্র করে দোষ স্বীকার করা, তিনিই আবার হাজির হলেন। বলা হলো তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হলো। কিন্তু ভুক্তভোগী এসে বললো, সে মরেনি। এরপরও আসামিরা বলবে, ‘না আমরা তাকে ধর্ষণের পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়েছি।’ আদালত বললেন, এ আচরণ কি স্বাভাবিক?
সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা কী ব্যাখ্যা দিয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমি তাদেরকে অ্যারেস্ট করেছি, রিমান্ডে নিয়েছি। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দিয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট রেকর্ড করেছেন। আমার কী করার আছে।’
এর আগে, গত ২৫ আগস্ট এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা ও যৌক্তিকতা, মামলার নথি তলব চেয়ে পাঁচ আইনজীবী আবেদনটি করেন।
আবেদনকারী পাঁচ আইনজীবী হলেন- আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির ও মো. মিসবাহ উদ্দিন। পরে গত ২৭ আগস্ট শুনানি শেষে ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় সাবেক তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। মামলার নথিসহ হাজির হতে হবে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তাকে।
গত ২৪ আগস্ট ধর্ষণের পর নদীতে মরদেহ ফেলে দেয়া স্কুলছাত্রীর ৪৯ দিন পর জীবিত প্রত্যাবর্তনের খবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টের নজরে আনেন। তখন আদালত আইনজীবী শিশির মনিরকে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেন। এরপর ২৫ আগস্ট একটি রিভিশন মামলা করা হয়।
ঘটনার বিবরণী থেকে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়। গত ৬ আগস্ট নিখোঁজ স্কুলছাত্রীর বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ আব্দুল্লাহ, রকিব ও খলিল নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। স্বীকারোক্তিতে তারা বলে, তারা ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
জবানবন্দি নেয়ার পর আসামিদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু ২৩ আগস্ট ওই ছাত্রীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আসামিরা কীভাবে ধর্ষণ ও হত্যা সম্পর্কিত স্বীকারোক্তি দিয়েছে, যেখানে ওই ছাত্রী অক্ষত অবস্থায় ফেরত এসেছে? আবেদনে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বাদী করা হয়েছে। জাগোনিউজ