শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বঞ্চিত করার জন্য চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় শর্ত আরোপের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট পাঁচটি কর্তৃপক্ষকে আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন ডিগ্রি বাধতামূলক থাকার বিষয়টি বাতিল করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রীপ্রাপ্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাঁচ মেধাবী শিক্ষার্থীর পক্ষে আজ বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ রেজাউল করিম সিদ্দিকী এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশ প্রেরণকারী পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- চাট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসম্পন্ন মোহাম্মদ শাহজাহান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ), সুদীপ দাশ (আইন বিভাগ), মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সাজু (ইসলামের ইতিহাস বিভাগ), মোঃ মনিরুজ্জামান (ইসলামের ইতিহাস বিভাগ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসম্পন্ন মোহাম্মদ শাহিন আলম (রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ)।
উল্লেখ্য, তর্কিত চাকুরির বিজ্ঞাপনে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্যান্য পদের পাশাপাশি শিক্ষক (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী), শিক্ষক (বধির) ও হাউজ পেরেন্ট কাম টিচার হিসেবে মোট ৪৭টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। উক্ত পদসমূহে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা হিসেবে যেকোনো স্বীকৃত বিশবিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রিসহ ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন ডিগ্রি থাকার বিষয়টি আবশ্যিক উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাদের গোটা শিক্ষাজীবন তথা প্রায় সতের বছর বিশেষ শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন ডিগ্রি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় বলে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মনে করেন। উপরন্তু, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এতটাই অপ্রবেশগম্য যে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করাই অত্যন্ত কষ্টের বিষয়। বর্তমানে শিক্ষা উপকরণ যেমন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অপ্রতুল, তেমনি শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনুকূলে নেই। এমতাবস্থায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে একটি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা বিরল ঘটনা। ফলে বাড়তি অপ্রয়োজনীয় আরকেটি ডিগ্রি আবশ্যক করায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন বিধায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে।
আইনী নোটিশে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে কর্তৃপক্ষের আচরণ অবিবেচনাপ্রসূত এবং একই সাথে গণপ্রতাজতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ এর সংশ্লিষ্ট বিধানে বর্ণিত অধিকারসমূহের লঙ্ঘন হয়েছে।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, উপরোক্ত তর্কিত কার্যের মাধ্যমে নোটিশ গ্রহিতা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর বাস্তবায়নের দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছে।
একইভাবে নোটিশ গ্রহিতা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব তথা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব তথা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর যথাক্রমে ১৮ ও ২০ নং ধারায় বর্ণিত কার্যাবলী প্রতিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।
নোটিশ গ্রহিতাদের উপরোক্ত ব্যর্থতা সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের পাশিাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের ৩৬ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ৩৭ ধারায় বর্ণিত কারাদন্ডে দন্ডিত হবার মতো ফৌজদারি দায় দৃষ্টি করেছে।
নোটিশ পাওয়ার ৫ দিনের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন ডিগ্রি বাধতামূলক থাকার বিষয়টি বাতিল করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং প্রচলিত আইনে অভিযুক্ত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে কারণ দর্শানোর দাবি জানানো হয়েছে।