গত তিন বছর অনেক করদাতা অনলাইনে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিলেও এবার সনাতন পদ্ধতিতেই তাদেরকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির কারণে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বন্ধ রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার ব্যবস্থায় নানা ত্রুটি রয়েছে। পদ্ধতিটি গ্রাহকবান্ধব নয়। করদাতারা এই সার্ভারে গিয়ে রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে এনবিআর এ বছর অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার ব্যবস্থা স্থগিত করেছে।
প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়কে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার জন্য নির্ধারিত। সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাসজুড়ে করদাতারা রিটার্ন দাখিল করেন। ১০ বছর ধরে করদাতাদের সহযোগিতা করতে এনবিআর নভেম্বর মাসে দেশব্যাপী কর মেলার আয়োজন করে আসছে। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর সেই মেলাও আয়োজন করবে না এনবিআর।
এদিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে যাদের টিআইএন আছে, তাদের সবার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে এ বছর মোট রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ বাড়বে। মেলায় ঝামেলাবিহীনভাবে করদাতা রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ করতে পারছিলেন। এ বছর সে সুযোগ না থাকায় করদাতাদের নিজস্ব কর অঞ্চলের সার্কেল অফিসে রিটার্ন দাখিল ও কর জমা দিতে হচ্ছে। করদাতাদের সহায়তা করতে কর অঞ্চলের অফিসগুলোতে সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নভেম্বরে অনলাইন আয়কর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা চালু করে সরকার। অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা চালু করতে ৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ভিয়েতনামভিত্তিক এফপিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাটি চালু করে দেওয়ার কাজ পায়। ২০১৮ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এই সেবা মোটেই গ্রাহকবান্ধব নয় এবং বেশকিছু ত্রুটি রয়েছে বলে উল্লেখ করে।
দেশে বর্তমানে ৫০ লাখ টিআইএন রয়েছে। এর মধ্যে ২২ লাখ টিআইএনের বিপরীতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাত হাজার ২০৯ জন করদাতা তাদের রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করেন, যা মোট দাখিল করা রিটার্নের শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর আগের চার বছরে ১৩ হাজার ৮৯৫ জন এই ব্যবস্থায় রিটার্ন দাখিল করেন।
এনবিআরের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে করদাতার নিজ নিজ কর অঞ্চলের সার্কেল অফিসে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে ইটিআইএন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হয়। সার্কেল অফিস করদাতার নিবন্ধন করে একটি ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়। পাসওয়ার্ডটি পরে করদাতা নিজের মতো করে ঠিক করে নিতে পারেন। এরপর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে করদাতা তার রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
যদিও অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ায় আগ্রহ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে দুই হাজার টাকার বিশেষ কর ছাড় দেওয়া হয়। এতে করদাতাদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দেয়। কিন্তু সেই সুযোগ নিতে পারছেন না করদাতারা।