মাদক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে এক বছরের কারাদণ্ড হলেও কারাগারে যেতে হচ্ছে না নাজমা খাতুন নামের ফেনীর এক নারী। মামলায় ১ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারীকে আট শর্তে প্রবেসন (সংশোধন) -এর সুযোগ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ফেনীর একটি আদালত।
আজ বুধবার (১৪ অক্টোবর) এ রায় ঘোষণা করেন ফেনীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট -এর দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসেন।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোঃ করিমুল হক দুলাল। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এপিপি নিমাই লাল সূত্রধর।
আদালত সূত্র জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই ২০ গ্রাম গাঁজাসহ নাজমা খাতুনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। ওইদিনই পরশুরাম থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর অধীনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। একই বছরের ৫ ডিসেম্বর আসামির বিরুদ্ধে মাদক আইনের দুটি ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করেন।
আদালতে আসামি স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করায় তাকে প্রবেসন দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বিচারক। এজন্য দ্যা প্রবেশন অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ -এর ৫ ধারায় আট শর্তে পরশুরামের সমাজ কর্মকর্তা ও প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে আগামী এক বছরের অর্থাৎ ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবেসন (সংশোধন) প্রদানের আদেশ দেন আদালত।
প্রবেসনের শর্তগুলো হচ্ছে-
- নাজমা খাতুন কখনো মাদক গ্রহণ, পরিবহণ ও বিক্রয় করবে না;
- আসামি মাদক বিরোধী জনমত ও আন্দোলন এবং জনসচেতনতায় ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে;
- আসামির ৪ সন্তানকে তিনি পড়াশোনার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবে এবং তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করবে;
- আসামি প্রবেসনকালীন সময়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের বিষয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবেন;
- আসামি তার নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় ও তার গ্রামের মধ্যে সরকারি রাস্তার পাশে ১০টি ফলজ ও ১০টি বনজ গাছ রোপণ করবেন এবং বিষয়টি প্রবেসন কর্মকর্তাকে অবহিত করবে;
- আসামি প্রবেসন চলাকালীন সময়ের মধ্যে ফেনী জেলা সমজাসেবা কার্যালয় ও পরশুরাম উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় এর মাধ্যমে সরকারীভাবে পরিচালিত যে কোন একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। আসামি স্বনির্ভর হওয়ায় উদ্দেশ্যে প্রয়োজন সাপেক্ষে জেলা সমাজসেবা অফিসার তার জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ফেনী জেলা সমাজসেবা অফিস ও পরশুরাম উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের উপ-পরিচালককে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়;
- আসামি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবেসন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ রাখবে এবং প্রবেসন কর্মকর্তার নির্দেশ মতে তিনি নিজেকে পরিচালিত করার চেষ্টা করবে; এবং
- প্রতি দুই মাস পর পর পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাথে দেখা করে তার অগ্রগতি জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরশুরাম থানার ওসিকে আসামি প্রবেসন আদেশ মেনে চলে কিনা এবং তার অগ্রগতির বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন আকারে প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর প্রতিবেদন এই আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।