বগুড়ায় আইনজীবীর মাধ্যমে ধর্ষণচেষ্টার মামলা টাকার বিনিময়ে আপোষ করায় আসামি খালাস পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা আইনজীবী সমিতিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সম্প্রতি বগুড়ার দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর এ আদেশ দেন। পেশার প্রতি সৎ না থাকায় আদালত মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) এসএম খায়রুল বাশার সোহাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বার সমিতিকে আদেশ দেন।
আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বগুড়া অ্যাডভোকেটস্ বার সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সোহাগকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে অভিযুক্ত আইনজীবী এসএম খায়রুল বাশার সোহাগকে এ ব্যাপারে আগামী সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তার জবাব বার কাউন্সিলে পাঠানো হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৫ সালের ৭ জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আসামি শেরপুর উপজেলার চকপোতা গ্রামের মৃত আবদুল্লাহ কাজীর ছেলে ইউসুফ আলী এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিশোরীর বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শেরপুর থানা ১৫ জুলাই মামলাটি রেকর্ড করে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফারুকুল ইসলাম ৬ নভেম্বর আদালতে ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। জড়িত না থাকায় অপর দুই আসামিকে অব্যাহতির প্রার্থনা করেন। আইনজীবী এসএম খায়রুল বাশার সোহাগ জামিন প্রার্থনা করলে আদালত ইউসুফ আলীকে জামিন দেন।
বিচার কার্য শুরু হওয়ার পর মামলার বাদী ও কিশোরীর বাবা আদালতকে জানান, আসামি পক্ষের আইনজীবী এসএম খায়রুল বাশার সোহাগ এক লাখ টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করেছেন। তার পকেটে জোরপূর্বক ৩০ হাজার টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আপোষ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে তিনি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন যে, অর্থের বিনিময়ে মামলার মীমাংসা করেননি, তার মেয়ের সঙ্গে ইউসুফের সম্পর্ক ছিল। একইভাবে ভিকটিম কিশোরী ও তার মা মামলা মীমাংসা করেননি এবং আসামির দোষ নেই মর্মে আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দেন। অপর সাক্ষীরাও মিথ্যা সাক্ষ্য দেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, অ্যাডভোকেট এসএম খায়রুল বাশার সোহাগ গত ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর আসামি ইউসুফ আলীর আইনজীবী নিযুক্ত হলেও মামলা দাখিলের পর থেকে প্রায় দু’বছর উভয়পক্ষকে নিয়ে মামলা মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বাদী, ভিকটিম ও অন্য সাক্ষীরা আর্থিক লেনদেনে অসততার অভিযোগ করেছেন। অ্যাডভোকেট সোহাগ দীর্ঘদিনেও আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির না করে আপোষের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তিতে রত ছিলেন। তিনি পেশার প্রতি সৎ না থেকে নিজেকে বেআইনি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন। তার এমন ভূমিকা নিঃসন্দেহে পেশাগত অসদাচরণের শামিল।
বগুড়ার দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর গত ২১ সেপ্টেম্বর রায়ে উল্লেখ করেন, আসামি ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া আদালত গত ১২ অক্টোবর অ্যাডভোকেট এসএম খায়রুল বাশার সোহাগের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বগুড়া অ্যাডভোকেটস্ বার সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আদেশ দেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট এসএম খায়রুল বাশার সোহাগ জানান, তিনি চক্রান্তের শিকার। তার বিরুদ্ধে আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।
এদিকে বগুড়ার দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি আশেকুর রহমান সুজন জানান, বর্তমানে জেলা যুগ্ম জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী এসএম খায়রুল বাশার সোহাগের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের সত্যতা রয়েছে। এখানে কোনও ষড়যন্ত্র নেই।