টেলিভিশনের পর্দায় পরিষ্কার ছবি দেখতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিদের ভরসা এলুমিনিয়ামের ঢাকনা। কারা অভ্যন্তরে টিভি এন্টেনা লাগানোর সুযোগ নেই বন্দিদের। অগত্য ওয়ার্ডের জানালায় বেঁধে দেয়া ছোট এলুমিনিয়ামের ঢাকনাকে এন্টেনার বিকল্প ব্যবহারের নিরন্তর চেষ্টা। খবর স্থানীয় গণমাধ্যম দৈনিক পূর্বকোণের
প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দি কল্যাণের জন্য কারা অধিদপ্তরের নানা উদ্যোগ থাকলে তাদের বিনোদনে তেমন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির অনুদানে চট্টগ্রাম কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টেলিভিশন থাকলেও অধিকাংশ অচল। যে কয়টি সচল রয়েছে তাতেও ছবি দেখা যায় ঝাপসা ও ঝিরঝিরে।
আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে আসা বেশ কয়েকজন বন্দির সাথে কথা বলে জানা যায়, কারাগারের ওয়ার্ডে থাকা টেলিভিশনে শুধুমাত্র বিটিভি দেখা যায়। তাও ছবি পরিষ্কার নয়। তাই অনেকে ওয়ার্ডের জানালার সাথে এলুমিনিয়ামের ছোট ঢাকনা বেধে দিয়েছে। এতে টিভির পর্দায় তুলনামূলক পরিষ্কার ছবি দেখা যায়।
অনেকের ধারণা মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক পেতে এসব ঢাকনা ব্যবহার করা হচ্ছে। তা কিন্তু সঠিক নয়। সুইডেনের সলেনটুনা কারাগারকে অনেকে বলেন কয়েদিদের প্রাইভেট কারাগার। জেলখানার ঘরগুলোতে বাথরুম, বিছানা, পড়ার টেবিল, টিভি রয়েছে। সেখানকার কারাগারে কোন কয়েদির রুমে কম্পিউটার, কারো রুমের দেয়ালে রয়েছে গিটার।
ভেনেজুয়েলার এন্টনিও প্রিজন কারাগারকে কারাগার না বলে পার্টি প্রিজন বলা ভালো। কারণ এ কারাগারে বন্দীদের এসব একেবারেই নিয়মিত ঘটনা। যে বন্দি ছবি আঁকতে পছন্দ করেন তার ঘরটা দেখলে মনে হবে কোন চিত্র প্রদর্শনীতে হাজির হয়েছেন। টিভি-সিনেমা দেখার জন্য রয়েছে আলদা হল রুম।
ভেনিজুয়েলা কিংবা সুইডেন নয়। নিউজিল্যান্ড, স্পেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বন্দিদের বিনোদনের জন্য নানা রকম ব্যবস্থা রয়েছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে বন্দিদের বিনোদনের ব্যবস্থা বলতে তেমন কিছুই নেই।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। এরমধ্যে বন্দি সংখ্যার দিক থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্রীয় কারাগার। প্রায় ১৮’শ বন্দির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ কারাগারে হাজতি আর কয়েদি মিলে গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার বন্দি থাকে। বিপুল পরিমাণ বন্দির বিনোদন বলতে প্রতি ওয়ার্ডে একটি টেলিভিশন রয়েছে। কারাবন্দিদের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভাল করতে দানশীল ও ধনাঢ্য সমাজসেবা মনোভাবাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বেসরকারি কারাপরিদর্শক হবার কথা থাকলেও তা হয়নি।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, বন্দিদের বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডগুলোতে টেলিভিশন রয়েছে। চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণ ক্ষমতার তিনগুন বন্দি থাকে সবসময়। জায়গা সংকটের কারণে নতুন করে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। খালি জায়গা থাকলে মাঝে মাঝে বন্দিদের নিয়ে খেলাধুলা ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতো। যতুটুক সম্ভব বন্দিদের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে চেষ্টা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ।
বন্দিদের বিনোদনে কারা কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘স্বরশীলন কারা শিল্পী গোষ্ঠি’। এতে হাজতি আর কয়েদি মিলে ১৫ জন শিল্পী আছেন। তারা আধুনিক ও পুরনো দিনের গানের পাশাপাশি দেশাত্ববোধক, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকেন। এ সংগঠনের শিল্পীরা কারা অভ্যন্তরে কেস টেবিল রুমে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা গান-বাজনার পাশপাশি কারাগারের বিশেষ দিবস, কারা সপ্তাহ, জেল হত্যা, জাতীয় দিবস, কারা সংশ্লিষ্ট বিশেষ মেহমানের বিদায় ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে কারা মাঠে নির্মিত মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকেন।
স্বরশীলন শিল্পী গোষ্ঠির একটি হারমোনিয়াম, দুটি তবলা, দুটি কঙ্গো, একটি স্প্যানিশ গিটার, একটি পারকিউশন, একটি কি-বোর্ড ও একটি মন্দিরা রয়েছে। গানের পাশাপাশি আবৃত্তি, নৃত্য, অভিনয় ও সাহিত্য চর্চার সুযোগ রয়েছে। সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি ওয়ার্ড ও সেলে সুযোগ রয়েছে টেলিভিশন দেখার। এছাড়া বন্দিদের জন্য লুডু, ক্যারম ও তাস খেলার ব্যবস্থা রয়েছে সীমিত পরিসরে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন জানান, বন্দি ও হাজতিদের নিয়ে একটি শিল্পী গোষ্ঠি রয়েছে কারাগারে। করোনাকালিন সময় এ শিল্পী গোষ্ঠির কার্যক্রম আপাতাত বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বন্দিদের বিনোদনে নতুন বিষয় যোগ করতে।
জেল সুপার বলেন, মায়ের সাথে বন্দি শিশুদের জন্য কারা অভ্যন্তরের ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুদের বিনোদনে নানা ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে দেয়ালে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি আঁকা হয়েছে। অপরাজেয় বাংলা ও সমাজ সেবার উদ্যোগে মায়ের সাথে থাকা শিশুদের ছয় বছর পর্যন্ত গান, পড়াশোনা শেখানো হয়।