বাংলাদেশে নাটক-সিনেমায় বিয়ের দৃশ্যে ‘কবুল’ শব্দ উচ্চারণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং জনস্বার্থে আজ বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) অ্যাডভোকেট মোঃ মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ প্রেরণ করেছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রচলিত আইন দি মুসলিম পার্সোনাল ল’ (শরিয়ত) আইন, ১৯৩৭ -এর ধারা ২ অনুযায়ী বিবাহ, তালাক ভরণপোষণ, মোহর প্রভৃতি ক্ষেত্রে পক্ষগণ যদি মুসলিম হয় সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়গুলোতে মুসলিম আইন (শরিয়ত) প্রয়োজ্য হবে।
মুসলিম আইনের বই “Muslim Law”, By Khalid Rashid (Fifth Edition), Page: 60-61, তে বিবাহের প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে:
the formalities of a valid Muslim marriage are-
Formalities of a Valid Marriage:
Marriage may be constituted without any ceremonial; there are no special rights, no officiants, no irksome formalities. Nevertheless, the following conditions are necessary:
i. Offer on the part of one party to the marriage
ii. Acceptance by the other party
iii. Presence of two witnesses where the parties are Hanafis, no witnesses are required if the parties are Shias.
iv. The words with which the marriage is contracted must be clear and unambiguous.
v. The proposal and acceptance must both be expressed in one and the same meeting.
সুতরাং মুসলিম নারী ও পুরুষ উপরোক্ত আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করলেই তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গণ্য হবে।
অপরদিকে বাংলাদেশে প্রচলিত আরেকটি আইন, মুসলিম ম্যারিজ অ্যান্ড ডিভোর্স (রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট), ১৯৭৪ -এর ধারা ৩ অনুযায়ী, মুসলিম নারী পুরুষের মধ্যে বিবাহ মুসলিম আইন অনুযায়ী হবে, অতঃপর উক্ত আইনের অধীনে তা নিবন্ধন করতে হবে। সেক্ষেত্রে উক্ত আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী মুসলিম আইনে বিবাহ সম্পাদন করার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে তা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, তবে যদি নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) যদি বিয়েতে উপস্থিত থাকেন তবে তিনি বিবাহের অনুষ্ঠানের সময়ই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন । এছাড়া কেউ যদি বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে, বিয়ে এবং বিয়ে রেজিস্ট্রেশন দুটোই পৃথক বিষয়। মুসলিম নারী ও পুরুষের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় মুসলিম আইন (শরিয়ত) অনুযায়ী । অপরদিকে বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা অপরাধ হলেও, মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে বৈধ থাকবে।
নোটিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন সিনেমা, নাটক, ভিডিও তে বিভিন্ন দৃশ্যে বিবাহের দৃশ্যায়নে মুসলিম অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা পূরণসহ “কবুল” শব্দ উচ্চারণ করে থাকেন। যার মাধ্যমে উক্তি মুসলিম অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা মুসলিম আইন (শরীয়ত) অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গণ্য হবেন। কারণ The Muslim Personal Law (Shariat Application Act, 1937 এর ধারা ২ অনুযায়ী বিবাহের ক্ষেত্রে সরাসরি মুসলিম আইন (শরিয়ত) প্রয়োগ হবে। এখানে অভিনয়ের যুক্তিতে এই বিয়েকে অস্বীকার করা যাবে না। কেননা অভিনয়ের মধ্যে কেউ মিষ্টি খেলে সে যেমন মিষ্টির স্বাদ অনুভব করবে, অপরদিকে অভিনয়ের মধ্যে কেউ বিষ খেলে সে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবে ।
এজন্য আইনি নোটিশে, বিবাদীগণকে উক্ত নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সিনেমা, নাটকে, বিবাহ দৃশ্যায়নে “কবুল” শব্দ উচ্চারণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করা হবে।