সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যাপর্যায়ে চলে যাচ্ছে বললে ভুল হবে না বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমে নিত্যদিনের সাধারণ ঘটনা হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
আজ রোববার (১ নভেম্বর) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলা হয়েছে। মামলায় বাসচালকসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- হানিফ পরিবহনের বাসচালক জামাল হোসেন, চালকের সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার মো. জনি।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যাপর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যা বলা বোধ হয় ভুল নয়। অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়াভাবে বাস চালানো, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে এই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কে প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, নাকি হত্যা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বসাধারণের মনে।’
রায়ে বলা হয়, প্রতিটি সড়ক যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। সড়ক দুর্ঘটনা তো ঘটছেই, মারা যাচ্ছে সব বয়সী মানুষ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীও রেহাই পাচ্ছে না বেপরোয়া বাসচালকদের হাতে। সড়ক যোগাযোগমাধ্যম এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দিনে দিনে সড়কে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কোনোভাবেই এই মৃত্যুর মিছিল থামছে না।
সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আদালত বলেছেন, ‘তাহলে আর কবে আমরা সজাগ হব। সড়কে মৃত্যু আমাদের জন্য যদি সচেতন না করে, তাহলে আর কবে সচেতন করবে? নিহত ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল মেধাবী ছাত্র ছিলেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের জন্য যখন নিজেকে তিনি প্রস্তুত করেছিলেন, সেই মুহূর্তে বাসচালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারীর নির্মমতার শিকার হয়ে তাঁকে অকালেই প্রাণ দিতে হলো। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার হতাশায় নিমজ্জিত।’
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণ শেষে বাস ড্রাইভার, মালিক, সুপারভাইজার হেলপার এবং যাত্রীসাধারণের সচেতনতার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। সচেতনতার জন্য আদালতের দেওয়া নির্দেশনাগুলো হলো:
- গাড়ির চালক, সুপারভাইজার, হেলপারদের দায়িত্ব দেওয়ার আগে তারা মাদক সেবন করেছে কিনা সে বিষয়ে ডোপ টেস্ট করতে হবে। গাড়ি ছাড়ার কাউন্টারে, পথিমধ্যে রাস্তায়, বিরতি ও গন্তব্য স্থানে গাড়ির চালক ও হেলপারকে ডোপ টেস্ট করতে হবে।
- গাড়ির চালক, সুপারভাইজার ও হেলপাররা প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে কর্কশ ও অভদ্র আচরণ করেন। তাদের অবশ্যই যাত্রীদের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। গাড়ির চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের গাড়ি চালানোর বিষয় এবং যাত্রীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে উচ্চতর ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
- মহাসড়কে প্রতি তিন কিলোমিটার পরপর গাড়ির চালক, সুপারভাইজার, হেলপার ও যাত্রীসাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফ্রি আধুনিক বাথরুম-টয়লেট স্থাপন করতে হবে। তবে এজন্য সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে বাস মালিকদের নির্ধারিত হারে বার্ষিক চাঁদা দিতে হবে সরকারকে।
- মহাসড়কে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের উপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।