মোঃ রায়হান আলী: আজকের শিক্ষানবিশরা-ই আগামী দিনের বার কাউন্সিলের তালিকাভূক্ত আইনজীবী। শুধু তাই নয় আগামী দিনের খ্যাতনামা প্রসিদ্ধ আইনজীবীও বটে। এদের মধ্যেই আছে আগামীর সম্ভাবনাময় সমাজ তথা জাতীকে পরিচালিত করার মত মেধাবী। হতে পারে এদের মধ্য থেকেই কেউ কেউ এম,পি মন্ত্রী বা মিনিস্টার। এরাই আগামীর জাতীর কর্ণধার। প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের খেতাব প্রাপ্ত এক নাগরিক।
এত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে বার কাউন্সিলের দীর্ঘ সূত্রিতা আর অনিয়মের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে চরম বিপদে আইডেন্টিটি সংকটে ভুগছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। নেওয়া হচ্ছে না সঠিক সময়ে পরীক্ষা। বছরে দুটি পরীক্ষা সম্পন্ন করার নিয়ম থাকলেও তা তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত মহামান্য হাইকোর্টের মামলায় রায়ে বছরে অন্তত একটি পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশনা থাকলেও তা যেন আমলেই নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ তিন বছর পরে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী একটা প্রিলি পরীক্ষা পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রিলিতে সামান্য কিছু পাশ করলেও উদ্ভুত করোনার পরিস্থিতে আর রিটেন নেওয়া হয়নি। ফলে ভূক্তভোগীদের ভোগান্তির অন্ত নেই।
সম্প্রতিক জেলা বার গুলোতে গৃহীত পদক্ষেপ আর নোটিশের মাধ্যমে দালাল নির্মূল শুদ্ধি অভিযানের নামে এই অবহেলীত শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সাথে দূর্ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের দাবী। আদালত পাড়ায় উপযুক্ত দালাল নির্মূল কার্যক্রমে সাধুবাদ জানায় শিক্ষানবিশরা সহ সর্বস্থরের সুধীজন। কৌশুলীদের কাজ হল সাদা-কালোর মধ্য দিয়ে আইনী কৌশলের মাধ্যমে সঠিক অপরাধীকে চিহ্নিত করতে আদালতকে সাহায্য করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা কিন্তু কোন দোষীর পক্ষে কৌশল অবলম্বন করে তাকে আইনের ফাঁক-ফোকড়ে বাঁচায় দেওয়া নয়। কোন নিরপরাধ লোক যদি অপরাধীর কাতারে থাকে তবে তাকে কৌশলে নিরপরাধী প্রমাণ করা প্রকৃত কৌশুলীর কাজ। আর এই কৌশল যেন শিক্ষানবিশ দমনে নয় বরং শিক্ষানিশদের স্বতঃস্ফুর্তভাবে অনুপ্রেরণা জোগায়ে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে সহায়তা করতে সাহায্য করা হয়।
আইন বিষয়ে ডিগ্রীধারী শিক্ষানবিশদের প্রতি কোন অন্যায় আদেশ বা আচরণ মোটেও কাম্য নয়। এই শিক্ষানবিশরা আপনাদেরই ভাই,ভাতিজা কিংবা সন্তানতুল্য। তাদের সাথে স্নেহভাজন আচরণ একান্ত কাম্য।
শিক্ষানবিশরা আগামীর সম্ভাবনার তকমা মাথায় নিয়ে লড়ে যাচ্ছে জীবন যুদ্ধে। এত অবিচার আর নিজেদের জীবনের আইডেন্টিটি সংকটের উত্তোরণের জন্যই শিক্ষানবিশরা আজ প্রায় ৪ মাসেররও অধিক সময় রাজপথে আন্দোলন করে চলছে ন্যায্য দাবী আদায়ের। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতোমধ্যে সরকার পিইসি, জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার্থীদের অটো প্রোমোশন দিয়েছে। অটো প্রোমোশন পাবেন এইচএসসি পরিক্ষার্থীরাও।
এমনকি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগ বিসিএস পরীক্ষাতেও ইতোমধ্যে লিখিত মওকুফের গেজেট প্রকাশ করেছেন। তাহলে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা বেতন-ভাতাহীন পেশাগত সনদের দাবীটা কেন আলোর মুখ দেখছে না? এরা কি নাগরিক অধিকার পেতে পারে না? একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এত আইনের শিক্ষিত বেকার অনিয়মে কিংবা দাবী আদায়ের জন্য রাস্তায় রেখে দেশের উন্নয়ন কোন ভাবেই সম্ভব না। এটা জাতীর জন্য উন্নয়নে বাঁধার এক অসনী সংকেত। এত বড় একটা অংশ অন্ধকারে রেখে দেশ ডিজিটাল গড়ার স্বপ্ন মোটেও ভাল কিছু বহন করেনা।
ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশরা আজ এত বড় সামাজিকভাবে অপহেলীত কেন? কে বা কাহারা এমন সংকটে ধাবিত করে বিপদগামী করল? আসলে এসবের জন্য দায়ী কারা? কে নেবে এমন দায়? কে হবে কান্ডারী এই অবহেলীত শিক্ষানবিশদের? সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার কি পেতে পারে না এরা? এত সব নানা প্রশ্নের উত্তর কি আদৌ মিলবে? নিশ্চয়ই না।
হয়তবা বেশি ভালবেসে কেউ না কেউ আইন বিষয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়েছিল এই শিক্ষানবিশদের। আজ আইনের এ্যাকাডেমিক ডিগ্রী নিয়ে আইনজীবী হিসেবে সনদের জন্য যেন নদীর মাঝখানে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে শিক্ষানবিশরা। এ যেন গাছে উঠায় দিয়ে মই নিয়ে পলায়নের মত অবস্থা। অন্ধকারের পর একদিন আলোর মুখ দেখবেই শিক্ষানবিশরা তা যেন হয় অনতিবিলম্বে।
শিক্ষানবিশদের ন্যায্য দাবীর আন্দোলন প্রায় সফলতার দারপ্রান্তে এসেছে এটা অনেকের ধারনা কিন্তু এটার বাস্তবতা সন্নিকটে সবাই বললেও বাস্তবে নেই কোন তথ্যনির্ভর ব্যবস্থা। চলমান এমন সমস্যাটির দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে এমপি-মন্ত্রীসহ সুধী সমাজের। এমনকি মহান জাতীয় সংসদেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে দুজন এমপি মহোদয়।
শিক্ষানবিশরাও তো দেশের নাগরিক। শিক্ষানবিশরা পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজে নেই কোন স্বীকৃতি। কোর্টে তো প্রকারন্তে অনেকে নিজেদের লাভ-স্বার্থ পোক্ত করতে শিক্ষানবিশদের কৌশলগতভাবে হলেও দালাল অভিহিত করার প্রচেষ্টা অবলম্বন করে চলছে। এমন মানসিকতার পরিবর্তন হোক আদালত পাড়ায়। বরং বর্তমান সময়ে শিক্ষানবিশরা দালাল বা টাউট না বরং অবহেলীত এক লাল টাই ওয়ালা ভিকটিম।
শিক্ষানবিশদের এই চরম বিপর্যয়ে তাদের দাবী এদেশের আইন ব্যবস্থা যেহেতু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর আইনের ডিসিশন নজির হিসেবে ফলো করে তেমনি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আইনজীবী তালিকাভূক্তির নিয়ম ফলো করে বর্তমানের সনাতন তিন ধাপের পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করে রিটেন পরীক্ষা চিরতরে বাতিল করে দ্রুত আইনজীবী তালিকাভূক্ত করণ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা হোক। কিংবা প্রিলি পাশকৃতদের বর্তমান সমস্যা নিরসনে করোনাকালীন পরিস্থিতির কারনে আপাতত রিটেন মওকুফ করে ভাইভার মাধ্যমে দ্রুত আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত করণের ব্যবস্থা করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মোঃ রায়হান আলী: আইন শিক্ষার্থী, খুলনা।