ডোপ টেস্টে পজিটিভ এবং মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১০ সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে ডোপ টেস্টে পজিটিভ এসেছে ৬৮ জন পুলিশ সদস্যের।
মাদকাসক্তির অভিযোগে এর আগে ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেখান থেকেই ১০ জনকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
একযোগে এত সংখ্যক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। অভিযুক্ত ৬৮ জনের মধ্যে ৫০ জনই কনস্টেবল, নায়েক পাঁচ জন, সহকারী উপ-পরিদর্শক পাঁচ জন, সার্জেন্ট একজন এবং উপ-পরিদর্শক সাত জন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ওয়ালিদ হোসেন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মাদক সেবনের দায়ে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার এসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। এরমধ্যে বেশ কয়েকজনকে চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ডিএমপির মোট ১৮ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি শেষে তাদের মধ্যে ১০ জনকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডোপ টেস্টে যাদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির প্রমাণ মিলে প্রথম তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়। তদন্তে মাদকাসক্তির সত্যতা মিললে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সে সময় একটি সাময়িক চাকরিচ্যুতির আদেশ জারি করা হয়। এরপর ওই পুলিশ সদস্যকে শোকজ করে এর জবাব দিতে বলা হয়। জবাব দেওয়ার পর চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে কি হবে না, তা নির্ধারণ করা হয়।’
ডিএমপির কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার স্যার দায়িত্ব নিয়েই ঘোষণা দিয়েছিলেন, পুলিশের মধ্যে ডোপ টেস্ট করা হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাদকের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলি। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে মধ্যে সাতজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সার্জেন্ট, পাঁচজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), পাঁচজন নায়েক এবং ৫০ জন কনস্টেবল।
যে ১০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের মধ্যে কারো কারো বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মাদক আটকের পর সরকারি কোষাগারে কম জমা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদক দিয়ে ফাঁসানো, বিক্রি এবং উদ্ধারকৃত মাদক কম দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে আরও ২৯ জনের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ছয় জনের শাস্তি হয়েছে। তাছাড়া মাদক বিক্রিতে ১০ জন, সেবনে পাঁচ জন, মাদক দিয়ে ফাঁসানোয় ১০ জন এবং উদ্ধারকৃত মাদকের চেয়ে কম দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে চার জনের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই পুলিশ মাদক চক্র থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসুক। পুলিশের যারা মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’