কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের দিকনির্দেশনামূলক রায়ের আলোকে কমিটি গঠনসহ উক্ত রায় বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কাছে আবেদন জানিয়েছে নারী আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর প্রেরিত আবেদনে বলা হয়,
‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী সারা বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় দশ হাজার নারী আইনজীবী বিভিন্ন আদালতে আইন পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে রয়েছেন প্রায় এক হাজার আইনজীবী এবং এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে প্রায় পাচঁ হাজার নারী আইনজীবী রয়েছে।
সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই অত্যাচার,অবিচার, নির্যাতন আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামোতে কিছুসংখ্যাক দানবরূপী পুরুষদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে নারী। আমরা নারী আইনজীবীরা, নারী আইনজীবী সহকারীরা, কোর্ট চত্বরে বিভিন্ন ভাবে কর্মরত নারীরা ও যৌন হয়রানীর শিকার। আমরা সাধারণ মানুষকে আইনী সহায়তা প্রদান করি, সচেতন করি কিন্তু অনেক সময় নিজেরা আক্রমণের শিকার হয়েও অভিযোগ, অনুযোগ জানানোর কোন ব্যবস্থা বা কমিটি নেই বলে ধুঁকে ধুঁকে মরি বা কোর্ট ছেড়ে যেতেই বাধ্য হই।
কিন্তু এমনটি হতে পারেনা। “সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা পত্র”, গণপ্রজাতন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান, নারীর প্রতি সর্বপ্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ “সিডো” বাংলাদেশের নারী নীতি নারীকে দিয়েছে তার ন্যায্য অধিকার। তারপরও নির্যাতন, যৌন হয়রানী, ধর্ষণের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে মোট আইনজীবীর এক বিশাল জন গোষ্ঠী নারী আইনজীবী। তাই নারী নির্যাতিত হবে অথচ বিচার চাওয়ার সুযোগ বা জায়গা থাকবেনা? তা হতে পারেনা।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বারে বর্তমানে রয়েছেন সবার প্রিয় অভিভাবক, নারীবান্ধব আইনজীবী নেতা সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন স্যার এবং সেক্রেটারী জনাব ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল স্যার নিশ্চয়ই বোনদের পাশে থেকে একটি শক্তিশালী যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে শুভ কাজের সূচনা করবেন, নজীর সৃষ্টি করবেন বলে আশা রাখি এবং সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনকে অনুসরন করে ঢাকা বারসহ বিভিন্ন জেলা বার এসোসিয়েশন উদ্যোগ নিবে বলেই মনে করি।
বাংলাদেশের মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি মহোদয় মাননীয় বিচারপতি জনাব সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও মাননীয় বিচারপতি জনাব কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী মহোদয়ের বেঞ্চ “যৌন নিপীড়ন” রোধকল্পে দিক নির্দেশনা মূলক কালজয়ী রায় প্রদান করেছেন যা প্রতিপক্ষ মন্ত্রনালয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নারীদের কর্মস্থল, নির্দেশনা প্রতিপালনে বাধ্য। রীট পিটিশন নং ৫৯১৬/২০০৮ দেয়া রায় অতিসত্বর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বন্ধ হতে পারে নারীর প্রতি সহিংসতা ও পাশবিক নির্যাতন।
আমরা নারী আইনজীবীরা বিশ্বাস করি নারী পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় পরিপূরক হোক, আশা ও বিশ্বাস সমতার ভিত্তিতে নারী পুরুষের ব্যপক অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলতে পারবো সন্ত্রাস মুক্ত, নারী নির্যাতন মুক্ত একটি সুন্দর আইনাঙ্গন। অতিসত্বর বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ও ঢাকা বার এসোসিয়েশন যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।
আমরা ঐক্যবদ্ধ, আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও শক্তিশালী থাকতে চাই।’