যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ইতিহাসে প্রায় ৬৭ বছর পর কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে। লিসা মন্টেগোমারি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একমাত্র ফেডারেল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারী। আর ১৯৫৩ সালের পর লিসা মন্টেগোমারি হচ্ছেন কোনো নারী, ফেডারেল সরকার যাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে তাঁর কৌঁসুলিরা করোনায় আক্রান্ত বলে নিম্ন আদালতে আবেদন জানানোর পর বিচারক মৃত্যুদণ্ডের তারিখ স্থগিত করেন।
তবে ডিসি সার্কিট কোর্টের আপিল বিভাগের তিন বিচারক ১ জানুয়ারি রুল জারি করেন, নিম্ন আদালতের বিচারকের মৃত্যুদণ্ডের তারিখ স্থগিত করা ভুল ছিল। একই সঙ্গে আপিল বিভাগ চলতি মাসে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ নেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে লিসার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। ফেডারেল মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করবেন বলে ইতিমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।
লিসার কৌঁসুলিরা নিম্ন আদালতকে বলেন, ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের টেরে হাউটে ফেডারেল সংশোধনী কমপ্লেক্সে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁদের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপরই নিম্ন আদালতের বিচারক মৃত্যুদণ্ডের তারিখ স্থগিত করেন।
ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজন্সের পরিচালক মাইকেল কারবাহল ফেডারেল আইনের ক্ষমতাবলে লিসার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য ১২ জানুয়ারি নতুন তারিখ ধার্য্য করেন।
লিসার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০০৪ মিজৌরির আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে গলা টিপে হত্যা করেন। তবে ওই নারীর গর্ভের শিশুটি বেঁচে যায়।
লিসার কৌঁসুলি মেগান বারগো এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি ডিসি সার্কিট কোর্টের আপিল বিভাগের তিন বিচারকের আদেশের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য তিনি শিগগিরই পিটিশন করবেন।
বারগো বিবৃতিতে বলেন, ‘যেকোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে ফেডারেল সরকারকে অবশ্যই আইন অনুসরণ করতে হবে। নিম্ন আদালত এ ক্ষেত্রে সঠিক কাজটিই করেছেন। লিসার মানসিক অসুস্থতা, জীবনভর তাঁর ওপর ভয়ানক নির্যাতন ও ট্রমার বিষয়টি আমরা আদালতকে জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষের নানা পদে থাকা অনেক মানুষ চাইলে তাঁকে রক্ষা করতে পারতেন, কিন্তু তাঁরা সেটি কখনো করেননি। লিসার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কোনো নৈতিক কারণ থাকতে পারে না।’
অ্যাটর্নি বারগো আরও বলেন, ‘ফেডারেল সরকারের উচিত, লিসার জীবন শেষ করে দেওয়ার নির্দয় উদ্যোগ বন্ধ করা।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ কয়েক মাসে তাঁর প্রশাসন ১০টি ফেডারেল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের ইতিহাসে একক বছরে এত বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। এমনকি বেশ কয়েক বছর কোনো ফেডারেলর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা ঘটেনি। আর ১৯৫৩ সালের পর লিসা মন্টেগোমারি হচ্ছেন কোনো নারী, ফেডারেল সরকার যাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে।
সর্বশেষ ১৯৫৩ সালে বনি ব্রাউন হিডি নামে এক নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তার আগে একই বছর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে বহুল আলোচিত ইথেল রোসেনবার্গ নামে আরেক নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।