রাতে ঘুমানো ছাড়া সারা দিন গোয়ালেই কাটত তার। গরু এবং গরুর পাশে জড়ো করে রাখা গোবরের মাঝেই চলত অক্লান্ত পরিশ্রম। তবুও স্বপ্ন দেখতেন বিচারক হওয়ার। সেই স্বপ্নে ভর করে গোয়ালে বসেই দিন-রাত এক করে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতেন।
এবার সেই পরিশ্রমেরই ফল পেতে চলেছেন রাজস্থানের উদয়পুরের মেয়ে সোনাল। মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টাতেই রাজস্থান সেশনস আদালতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দিতে চলেছেন সোনাল শর্মা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালের বাবা দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুধ বিক্রির টাকাতেই সংসারের যাবতীয় খরচ চালান তিনি। তার উপর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ তো রয়েছেই। ছোট থেকেই বাবাকে কাজে সাহায্য করেন সোনাল।
প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম ভাঙে তার। উঠে বাবার সঙ্গে গোয়ালে চলে যান তিনি। তারপর সারাদিন গোয়ালেই কাটে। গোবর তোলা, গরুকে গোসল করানো, খাওয়ানোর কাজ শেষে নিজে পড়তে বসেন। গোয়ালেরই এক কোণায় তেলের টিনের ফাঁকা বাক্স পাশাপাশি সাজিয়ে টেবিল বানিয়ে নেন। তাতে বই খাতা রেখে চলে পড়াশোনা।
গরুর ডাক, গোবরের গন্ধ কোনও কিছুই তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে নি সোনালকে। শুধু খাবার সময়টুকু গোয়াল থেকে বের হন তিনি। অভাবের সংসারে কোন দিন কোচিং সেন্টার বা টিউশন নিতে পারেননি। সাইকেল চালিয়ে সময়ের অনেক আগেই মোহনলাল সুখোদিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পৌঁছে যেতেন। সেখানে লাইব্রেরিতে বসে নোট নিতেন। পড়াশোনা এগিয়েছে এ ভাবেই। কলেজের পরীক্ষাতেও ভাল ফল করেছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। মাত্র এক নম্বরের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করতে পারেননি। ছিলেন অপেক্ষমান তালিকায়। পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা থেকে সাত জন চাকরিতে যোগ দেননি। পদ ফাঁকা থাকার ফলে অপেক্ষমান তালিকা থেকে আরও সাত জন ডাক পান। সেই তালিকায় সোনালও রয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি সেশনস আদালতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেবেন তিনি।
তবে লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি তার। কাজে যোগ দেওয়ার পর তার প্রথম কাজ হবে মা-বাবাকে একটি ভাল জীবন দেওয়া। তাদের যাতে আর দুধ বিক্রি করে সংসার টানতে না হয় সেটা দেখা।
প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে এমন একটি সুযোগ পাওয়ার পর শৈশবের দিনগুলোর কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে সোনালের। অনেক সময়ই তিনি স্কুলে যেতেন জুতোয় গোবর লেগে থাকত। সারা গায়েও যেন গোবরের গন্ধ মিশে থাকত তার। দুধওয়ালার মেয়ে হিসাবে শুনতে হয়েছে কটাক্ষও।
এখন এই পরিচয়ই তার গর্বের কারণ। শুধু তার পরিবারের কাছেই নয়, সারা দেশের অনুপ্রেরণা তিনি।