ব্রাজিলের অগণিত অভিবাসীর মধ্যে সাফল্য ও কৃতিত্বে মেধার স্বাক্ষর রাখাদের অন্যতম হলেন মুহাম্মাদ আলি মজলুম। লেবানন বংশোদ্ভূত আলি ছিলেন ব্রাজিলের প্রথম মুসলিম ফেডারেল বিচারক।
১৯৫০ সালে আলির বাবা ব্রাজিলে এসে পৌঁছেন। তখন তাঁর কল্পনায়ও ছিল না, তাঁর সন্তান একদিন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্যাথলিক দেশের ফেডারেল জজ হিসেবে নিয়োগ পাবে।
মূলত অন্যান্য অভিবাসীর মতো আলি মজলুমের বাবাও কাজের সন্ধানে ব্রাজিলে পাড়ি জমিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি পথ-বিক্রেতা হিসেবে কাজ করেন। অতঃপর একজন ফার্নিচারের দোকান দেন। ১৯৬০ সালে আলি জন্মগ্রহণ করেন। আলি ছিলেন ৮ ভাই বোনের একজন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর শেষ করে আলি স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকে পড়া শুরু করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কাজ করা তাঁর মোটেও ইচ্ছা ছিল না। এরপর আইন বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে প্রথমে পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের প্রথম ফেডারেল বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।
আলি মজলুম বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত এই দেশের একমাত্র মুসলিম ফেডারেল জজ। অতি শিগগির আমি ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদোন্নতি অর্জন করব। আশাকরি আগামী বছরই আমার পদায়ন ঘটবে।’
আলি মজলুম কেবলমাত্র বিচারক হিসেবে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং তিনি আইন, বিচার ও ইসলামী বিধান সংক্রান্ত নানা গ্রন্থ রচনা করেন। নিজের মুসলিম পরিচয় তিনি ভুলে যাননি। বরং রচনাবলিতে ব্রাজিলের মুসলিমদের জন্য ইসলাম সম্পর্কে সুন্দর চিত্রায়ন করেন।
১৯৯৭ সালে সর্বপ্রথম তিনি বই লিখেন। তা ব্রাজিলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। আলি মজলুম বলেন, আইন বিষয়ে পাঁচটি বই এবং ইসলামী জীবনাচার সম্পর্কে একটি বই লিখেছি। এতে ইসলামী জীবনপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’
ব্রাজিল ও লেবাননের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান। বিভিন্ন সময় লেবাননের বিশাল সংখ্যক অভিবাসী ব্রাজিলে যায়। ব্রাজিলে লেবানন অভিবাসীদের সর্ববৃহৎ শিবির আছে। তাই দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে লেবাননের অভিবাসী যোগ্যতায় নিয়োগ পান।
ব্রাজিল বিশ্বের বর্ণবাদি দেশগুলোর অন্যতম একটি দেশ ছিল। তবে ডানপন্থীদের উত্থানে তা অনেকটা কমে এসেছে। আলিম মজলুম বলেন, বর্ণবাদ মুক্ত সমাজকে সবাই মেনে নিচ্ছে। তবে উঁচু শ্রেণির রাজনীতিবীদদের মধ্যে তা এখনো বহাল আছে। তারপরও এখানে অনেক চার্চ আছে যাতে প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা করা হয়।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর