যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বিক্ষোভের নামে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের আগ্রাসী তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। খবর বিবিসির।
কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনকে জয়ী হিসেবে ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই হঠাৎ করে ট্রাম্প সমর্থকরা সেখানে তাণ্ডব শুরু করে। ভাঙচুরের পাশাপাশি সেখানে গোলাগুলিও হয়েছে। এর পরপরই ওয়াশিংটনে কারফিউ জারি করা হয়।
বুধবার কংগ্রেস অধিবেশনের বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। এদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও রয়েছেন। ওই সমাবেশের বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
এদিকে, পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতার বিষয়ে ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, ‘অনেকেই অস্ত্রসহ এখানে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিতে এসেছে। তারা অস্ত্রের পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্য, ইট এবং বোতলও নিক্ষেপ করেছেন।’
জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে ওয়াশিংটন ডিসির নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য কারফিউ দেয়া, জরুরি পণ্য সরবরাহের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
আগামী ২১ জানুয়ারি দুপুর ৩টা পর্যন্ত এই ঘোষণা কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে নতুন করে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত শহরে কারফিউ জারি থাকবে।
এদিকে পার্লামেন্ট ভবনে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় হোয়াইট হাউসের তিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন পদত্যাগ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউস, সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিকেটা ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অফ স্টাফ স্টেফানি গ্রিশ্যাম বুধবার রাতে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে সারাহ ম্যাথিউস বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনে সেবা দিতে পেরে এবং যে নীতিগুলো আমরা গ্রহণ করেছি তাতে আমি গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি যা দেখেছি তাতে আমি ভীষণভাবে বিরক্ত। আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি যা এই মুহূর্ত থেকে কার্যকর হবে। আমাদের জাতির একটি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রয়োজন।’
ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮১২ সালে যুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন এমন আগ্রাসনের সাক্ষী হলো। ১৮১৪ সালে ওয়াশিংটনে অভিযান চালানের সময় ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার আলেক্সান্ডার ককবার্ন ও মেজর জেনারেল রবার্ট রোসের নেতৃত্বে নির্মাণাধীন ক্যাপিটল ভবনে আগুন জালিয়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। তবে প্রবল বর্ষণের কারণে সে যাত্রায় ওই ভবনটি বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়।
ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পার্লামেন্ট ভবন শুধুমাত্র একটি অবকাঠামো নয়। এটি তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি আমেরিকার গণতন্ত্র এবং আমাদের জীবন-যাপনের মূর্ত প্রতীক।’
সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গ করার দায়ে।
বুধবার আইন প্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন ঠিক সে সময়েই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক দেশটির আইনসভা কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে সহিংসতা চালায়।