দেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো নারী বিবাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) পদে আসীন হতে পারবেন না মর্মে নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
রায় প্রকাশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, গত শনিবার (৯ জানুয়ারি) রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
রুল খারিজ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, নারীরা মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় ফিজিক্যালি সমস্যায় থাকেন। মুসলিম বিবাহ হচ্ছে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আমাদের দেশে অনেক বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয় মসজিদের ভেতরে।
ওই সময় নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না এবং সে সময় তারা নামাজও পড়তে পারেন না। এ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নারীদের দিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফাউজিয়া করিম ফিরোজ।
তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, নারীরা বিমানের পাইলট হচ্ছেন, সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করছেন, তাহলে কেন নারীরা কাজি হতে পারবেন না?
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি হিসেবে তিনজন নারীর নাম প্রস্তাব করে উপদেষ্টা কমিটি। তিন সদস্যের এই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
ওই বছরের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা বিবাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’ মর্মে চিঠি দিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল বাতিল করেন।
পরে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন বিবাহ রেজিস্ট্রারের প্যানেলে এক নম্বর ক্রমিকে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করেন।
পরে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা বিবাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবে না মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট।