মীর শুভ: একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো সংবিধান। সংবিধান হলো রাষ্টের সর্বোচ্চ আইন যা রাষ্ট্রকাঠামো নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের যে তিনটি বিভাগ রয়েছে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ এদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করে। সংবিধান ছাড়া কোন রাষ্ট্র সুষ্ঠ ভাবে তার কার্যক্রম চলাতে পারে না।
আর এই সংবিধানেই রাষ্ট্রের নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকারের বর্ণনা করেছে এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে কিভাবে প্রতিকার পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
তবে মৌলিক অধিকার নিয়ে আলোচনার পূর্বে আমাদের একটা বিষয় ভালভাবে বুঝতে হবে। সেটা হলো মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার কি এবং এদের মধ্যে পার্থক্য কি? মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্য করতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়গুলো সামনে আসে তা হল-
সকল মৌলিক অধিকারই মানবাধিকার কিন্তু সকল মানবাধিকার মৌলিক অধিকার নয়। কেবলমাত্র ঐ সকল মানবাধিকারই মৌলিক অধিকার যেগুলো কোন দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়। সুতরাং মানবাধিকারের ক্ষেত্র ব্যাপক কিন্তু মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্র সংকীর্ণ।
১৯৪৮ সালে ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী মানবাধিকার হল ২৫টি। অপরদিকে মৌলিক অধিকারের এরকম কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। মৌলিক অধিকারের সংখ্যা একেক রাষ্ট্রে একেক রকম হতে পারে। যেমনঃ বাংলাদেশ সংবিধানে মৌলিক অধিকার ১৮টি।
মানবাধিকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করার পরই কিছু মানবাধিকার লাভের হকদার। যেমনঃ তার বাঁচার অধিকার,অন্নের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসার অধিকার, বাসস্থান ইত্যাদি। কিন্তু মৌলিক অধিকার প্রধানত একটি দেশের সকল নাগরিকের জন্যই প্রযোজ্য।
মানবাধিকার এবং তার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়। মানবাধিকার কোন দেশের আইন দ্বারা বলবৎ করা যায় না। কিন্তু মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট দেশের আইন দ্বারা বলবৎ করা যায়। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে দেশীয় আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। কিন্তু যেসকল মানবাধিকারগুলো কোন দেশের মৌলিক অধিকার সেগুলো লঙ্ঘিত হলে ঐ দেশের আদালতে মামলা করা যাবে।
তাহলে আমরা বলতে পারি, মানবাধিকারের মধ্যে যেগুলো দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে সেগুলো হলো মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে আদালতে অভিযোগ করা যাবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত অনুচ্ছেদগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে অনুচ্ছেদ ২৭ থেকে ৪৪ পর্যন্ত মোট ১৮ টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এসব মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে অনুচ্ছেদ ৪৪ অনুযায়ী মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য কোন সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করতে পারে।
অনুচ্ছেদ ১০২ এ বলা হয়েছে, “কতিপয় আদেশ ও নির্দেশ প্রভৃতি দানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা”। অনুচ্ছেদ ১০২ (১) এ বলা হয়েছে, কোন সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে এই সংবিধানের তৃতীয় ভাগের দ্বারা অর্পিত অধিকারসমূহের যে কোন একটি বলবৎ করার জন্য প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সাথে সম্পর্কিত কোন দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিসহ যে কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত নির্দেশাবলী বা আদেশাবলী দান করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে,সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিকে বা যে অধিকার বঞ্চিত হয়েছে তাকে অবশ্যই হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করতে হবে।
এবার আলোকপাত করা যাক রিটের বিষয়টি নিয়ে। রিট কি? রিট হলো এমন এক ধরনের অধিকার যেখানে, আদালত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘোষিত বা প্রচারিত বিধান বা আদেশ। এমন আদেশের মাধ্যমে আদালত কোন ব্যক্তিকে কোন কাজ করতে বা করা হতে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করে। মূলত রিট এর উৎপত্তি হয়েছিলো ব্রিটিশ আইন ব্যবস্থায়। সেই সময় রিট ছিলো শুধু রাজকীয় অধিকার (prerogative writ or royal writ) কারণ একমাত্র রাজা বা রাণী এই রিট জারি করতে পারতেন। কিন্তু কালক্রমে সকল সাধারণ জনগণও রিট করার অধিকার লাভ করে।
ধরুন, আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনাকে হঠাৎ গ্রেপ্তার করলো। কিন্তু গ্রেপ্তারের কারণ আপনাকে না জানিয়ে প্রহরায় আটক রাখলো। এবং আপনার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করলো। ঠিক সেই মূহুর্তে আপনার করণীয় কি?
কেননা আপনার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩ এ বলা হয়েছে, “গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ” অনুচ্ছেদ ৩৩ (১) এ বলা হয়েছে- গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারন জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।
একই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ ২- এ বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেফতারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে হাজির করা হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাকে তদতিরিক্তকালে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না।
কিন্তু উপরের আইনে উল্লেখিত বিষয়গুলোর কোনটিই আপনার সাথে করা হয় নাই। অর্থাৎ আপনার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি বা আপনার পক্ষের মনোনীত কোন ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে বন্দী হাজির রিট (Writ of Habeas Corpus) পিটিশন দায়েরের মাধ্যমে আপনি আপনার অধিকার আদায় করতে পারবেন।
“বন্দী হাজির রিট” হলো, যখন কোন ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়, তখন বন্দী হাজির রিট পিটিশন দায়ের করা যায়। যে কোন ব্যক্তি বন্দী হাজির রিট দায়ের করতে পারবে। বন্দী হাজির রিট মূলত বন্দীকে বা আটক ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ।
অর্থাৎ বন্দী হাজির রিটের ক্ষেত্রে আদালত বেআইনিভাবে আটককৃত কোন বন্দীকে আদালতে হাজির করার জন্য নির্দেশ দিতে পারে তার নিজের সন্তুষ্টির জন্য যে উক্ত ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষ উক্ত বিষয়ে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে মুক্তি দিতে পারে।
যদি আপনাকে আইন বহিঃর্ভূত আটক করে থাকে তবে উক্ত রিটের মাধ্যমে আপনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য থাকবে।
সংবিধানের রিট বিষয়ক এখতিয়ারের ১০২ (২) খ (অ) তে বলা হয়েছে, আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনি উপায়ে কোন ব্যক্তিকে প্রহরায় আটক রাখা হয় নাই বলে যাতে উক্ত বিভাগের (হাইকোর্ট বিভাগের) নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হতে পারে সেইজন্য প্রহরায় আটক ব্যক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করতে পারে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯১ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগ হেবিয়াস কর্পাস রিট জারি করে বেআইনিভাবে আটককৃত ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণীত ১৮টি মৌলিক অধিকারের যে কোন একটি লঙ্ঘিত হলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ (১) ও ১০২ (২) অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে রিট জারি করে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার অধিকার আদায় করতে পারবে।
মৌলিক অধিকারের আরো বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা করলে বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অনুচ্ছেদ ২৮ এ বলা হয়েছে, “ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য” ২৮ (১) এ বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
২৮ (২) এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে।
২৮ (৩) এ বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম,গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারনে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশ কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিকের কোনরুপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না।
এখন ধরুন, কোন ব্যক্তিকে তার ধর্ম বা জন্মস্থানের কারনে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যাপারে বৈষম্য করা হলো, সেই সময় ঐ ব্যক্তির করণীয় কি? কেননা তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
তিনি তার অধিকার আদায় করার জন্য সংবিধানের ১০২ (২) অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি পরমাদেশ বা হুকুম জারী রিট (Writ of Mandamus) জারি করতে পারেন।
যদি হাইকোর্ট বিভাগের নিকট এটি প্রতীয়মান হয় যে উক্ত ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে তাহলে হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্টভাবে আইনগত দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ (হুকুম) প্রদান করতে পারে।
অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন আইনগত দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য কিন্তু তিনি উক্ত দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করে বা ব্যর্থ হয়, তখন আদালত হুকুম জারী রিটের মাধ্যমে উক্ত দায়িত্ব পালনে নির্দেশ প্রদান করতে পারে। এবং হাইকোর্ট বিভাগের এরূপ নির্দেশের ফলে যে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল সে তার লঙ্ঘিত মৌলিক অধিকার আদায় করতে পারবে।
অনুচ্ছেদ ২৯ এ বলা হয়েছে, সরকারি নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকদের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রর্দশন করা যাবে না।
যদি এরূপ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির সাথে বৈষম্য করে তাহলে ঐ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা যে কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় এমন কার্য করা হতে বিরত থাকতে আদেশ দিতে পারে।
এবার আসি, মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত দুইটি মতবাদ নিয়ে, অনুচ্ছেদ ৩৫ এ বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ বিষয়ে দুইটি মতবাদ রয়েছে।
ভূতাপেক্ষ আইন (Doctrine of Ex post facto): অপরাধ সংঘটনকালে বলবৎ আইনের অধীন উক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে হবে তা ভিন্ন অন্যকোন আইনে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না। আবার অপরাধ সংঘটনকালে অপরাধটির জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত ছিল তা অপেক্ষা ভিন্ন শাস্তি দেয়া যাবে না। অর্থাৎ পূর্বের কোন অপরাধের জন্য পরে নতুন করে কোন আইন তৈরী করে শাস্তি দেয়া যাবে না। অপরাধ সংগঠনের সময় প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই তাকে শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং শাস্তি হবে ঐ সময়ের প্রচলিত আইনে যে পরিমান শাস্তির উল্লেখ আছে সে পরিমান।
দোবরা সাজা (Double Jeopardy): অর্থাৎ একই অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে দ্বিতীয় বার সাজা দেয়া যাবেনা। কিন্তু কোন ব্যক্তিকে যদি একই অপরাধের জন্য দ্বিতীয় বার সাজা দেয়া হয় তাহলে তা হবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। উপরিক্ত দুইটি মতবাদে যে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের কথা বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তির এমন অধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে উক্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে রীটের মাধ্যমে তার অধিকার আদায় করতে পারবে।
অনুচ্ছেদ ৩৫ (৫) এ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে তা হলো, কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না কিংবা কারও সাথে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মচারী কতৃক বা অন্য কোন ব্যক্তি দ্বারা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকার শাস্তি দেয়া হয় যা অত্যন্ত দুখঃজনক এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও বটে।
অনুচ্ছেদ ৩৯ এ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। যেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সংবাদ সংশ্লিষ্ট সকলে তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করবে।যদি এ ক্ষেত্রে অধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে রিটের মাধ্যমে অধিকার আদায় করতে পারবে।
আরো কিছু মৌলিক অধিকার আছে যেগুলো লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশে উক্ত অধিকার অর্জন করা যাবে। জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ, আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা।
মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য রাষ্ট্রের যেকোন নাগরিক রিট করতে পারেন। রিট করার এই অধিকার ৪৪ অনুচ্ছেদে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের অধিকার স্বয়ং একটি মৌলিক অধিকার।
সুতরাং কোন বক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে উক্ত অধিকার বলবৎ করার জন্য সে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত অধিকারবলে হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা দায়ের করতে পারে এবং হাইকোর্ট বিভাগ ১০২(১) উপ- অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে লঙ্ঘিত অধিকার বলবৎ করার জন্য যে কোন আদেশ নির্দেশ বা রীট জারি করতে পারবে। তবে,
প্রথমত, আবেদনকারীকে অবশ্যই সংক্ষুব্ধ হতে হবে। অর্থাৎ তার নিজের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হতে হবে; এবং লঙ্ঘনের ফলে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মৌলিক অধিকারটি অবশ্যই সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত যে কোন একটি অধিকার হতে হবে
তৃতীয়ত, মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগ যে কোন ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে নির্দেশ জারি করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এবং মৌলিক অধিকার প্রতিটি জনগণের মাঝে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী ও মজবুত করা সম্ভব।
মীর শুভ: শিক্ষার্থী; আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া