সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির তিন নম্বর হলে সমিতির সদস্যদের মধ্যে চেম্বার ও সিট বরাদ্দ করতে গিয়ে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে সদ্য বিদায়ী কমিটির বিরুদ্ধে। অব্যবস্থাপনা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কর্মকর্তারা অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এ নিয়ে সমিতির আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির তিন নম্বর হলের দ্বিতীয় তলার অবশিষ্ট কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় তলার দক্ষিণাংশে ১৪টি চেম্বার এবং উত্তরাংশে প্রায় ৬০/৭০ জন বিজ্ঞ সদস্য বসার জন্য স্থান সংকুলান করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি ৩নং হলের নবনির্মিত দ্বিতীয় তলায় চেম্বার ও সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
নবনির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করার ঠিক একদিন আগে বিদায়ী কমিটি স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে কোনোরূপ নিয়মনীতি না মেনে চেম্বার ও সিট বরাদ্দ করেন বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা অভিযোগ করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, তিন নম্বর হলের দ্বিতীয় তলায় ১৪টি চেম্বারের বিপরীতে সর্বমোট ৪৪ জন আবেদনকারী ও ৬০/৭০টি সিটের বিপরীতে প্রায় দুই শতাধিক আবেদনকারী বরাদ্দ পাবার জন্য আবেদন করেন। চেম্বার বরাদ্দের জন্য প্রত্যেক আবেদনকারী সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবর পে- অর্ডারের মাধ্যমে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা প্রদান করেন। কক্ষ নির্মাণের আগেই এই টাকা নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নিয়মানুযায়ী চেম্বার বরাদ্দের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের সিনিয়রিটি বিবেচনা করা হয় এবং পরবর্তীতে চেম্বারের প্রতুলতার বিপরীতে আবেদনকারী আইনজীবী বেশি হওয়ায় লটারির মাধ্যমে চেম্বার বরাদ্দের ব্যাপারে সমিতিতে মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। তবে চেম্বার বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার কোনোটিই মানা হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অত্যন্ত গোপনে চেম্বার বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন করা হয়। নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও। ৬০/৭০টি সিটের বিপরীতে প্রায় দুই শতাধিক আইনজীবী আবেদন করলেও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি আইনজীবীদের মতামত। অনিয়ম করে দেওয়া হয় সিট বরাদ্দ, মানা হয়নি প্র্যাকটিশনার- নন প্র্যাকটিশনার নীতি। এমনকি যাদের নামে পূর্বে সিট বরাদ্দ আছে অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদেরকে আবার বরাদ্দ দেওয়া হয় আর বঞ্চিত হন সমিতির সাধারণ সদস্যরা।
অভিযোগ আছে, বিদায়ী কমিটির কর্মকর্তাদের অধীনে আইন পেশায় নিয়োজিত জুনিয়রদের, খোদ কমিটির সদস্যদের ও কমিটির প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদেরকে সিট বরাদ্দ পাবার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ফলে বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ আইনজীবীরা। তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্বজনপ্রীতি করতে গিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করায় বিদায়ী কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ একাধিক আইনজীবী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আইনজীবী বলেন, চেম্বার ও সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো নিয়মনীতি। বিদায়ী কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার একদিন আগে সখ্যতা ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তাদের ভাষ্য মতে, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন কমিটির দুই সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও রেদোওয়ানুল ইসলাম। প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের জুনিয়রদের। বিবেচনায় নেওয়া হয়নি জ্যেষ্ঠতার অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব পায়নি প্র্যাকটিশনার-নন প্র্যাকটিশনার।
এদিকে সিলেট আইনজীবী সমিতির সদ্য সাবেক লাইব্রেরী সম্পাদক এডভোকেট তানভির আক্তার খান, এডভোকেট অরুপ শ্যাম বাপ্পী, এডভোকেট অনির্বান চেম্বার বরাদ্দ ও সিট বরাদ্দের অনিয়ম বিষয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এডভোকেট তানভির আক্তার খান জানান, জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে চেম্বার বরাদ্দ ও লটারির মাধ্যমে সিট বরাদ্দের প্রথা চালু থাকলেও এবার সদ্য সাবেক কমিটির কর্মকর্তারা এসবের ধার ধারেননি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়েছেন। সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আক্তার হোসেন খান, এডভোকেট আব্দুল খালিককেও চেম্বার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এসব অনিয়মের সাথে সদ্য সাবেক ও বর্তমান সভাপতি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোবেট ফজলুল হক সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক ১ শুয়েবুর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক ২ মাসুদুর রহমান খান জড়িত।
জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আজমল আলী বলেন, বিগত কমিটির কর্মকর্তারা নানান অনিয়ম করেছেন বিষয়টির সুরাহা করা প্রয়োজন সিলেট বারের সমিতি।
আইনজীবী সমিতির সদ্য সাবেক সেক্রেটারী এডভোকেট ফজলুল হক সেলিম বলেন, এবার আবেদনকারীর সংখ্যা ছিলো ৪ গুন। বরাদ্দে কোন অনিয়ম করা হয়নি। জেষ্ঠতার ভিত্তিতেই চেম্বার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আবেদনের কোথাও লটারীর কোন কথা লেখা ছিল না।
তিনি বলেন, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আক্তার হোসেন খান ৩ বার আপদকালীন ফান্ড থেকে সহযোগিতা নেওয়ায় তিনি বার্ষিক ৪২ হাজার টাকা ভাড়া দিতে অক্ষম হতে পারেন এই আশংকা থেকে তাকে চেম্বার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
তাছাড়া এডভোকেট আব্দুল খালিক সাহেব সিনিয়র হিসেবে চেম্বার পান কিন্তু চেম্বারে তিনি নিজে বসবেন না বলে উনাকেও দেওয়া হয়নি। এমপি ফরিদ সাহেবের ভাতিজাকে বরাদ্দের বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও তিনি হবিগঞ্জ বারের সিনিয়র হিসেবে তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সেলিম।