সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সাতক্ষীরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির শেষ দিনের মতো বাদী ও বিবাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে এ মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৪ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সাতক্ষীরা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে সাক্ষীর জবানবন্দি পৃথকভাবে তুলে ধরে। এসময় বলা হয়, সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এ মামলার অভিযোগ পুরোপুরি প্রমাণিত হয়েছে।
প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রপক্ষ আরও বলে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার জন্য বারবার চেষ্টা করে ঘাতকরা।
কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সংঘটিত শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তারই অংশ। ন্যায়বিচার হলে আসামিরা প্রত্যেকে দোষী প্রমাণিত হবেন এবং সর্বোচ্চ সাজা পাবেন।
অপরদিকে, বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের মামলার আরজি, পুলিশের চার্জশিট ও সাক্ষীদের জবানবন্দি ব্যাখ্যা করে বিবাদীপক্ষ বলে, এর মধ্যে অভিযোগের তথ্যগত অসংলগ্নতা ও অসংগতি রয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিরা কোনোভাবেই দোষী প্রমাণিত হননি। ন্যায়বিচার হলে সব আসামি খালাস পাবেন।
এদিন আদালতে অভিযুক্ত ৫০ আসামির মধ্যে ৩৪ জন উপস্থিত ছিলেন। অপর ১৬ জনের মধ্যে একজন অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া ১৫ জন পলাতক।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০২ সালে কলারোয়ার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় যাচ্ছিলেন।
কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহর পৌঁছালে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা গুলিবর্ষণ করে এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।
এসময় বিরোধীদলীয় নেতা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার গাড়িবহরে থাকা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, শেখ হাসিনার ক্যামেরাম্যান শহীদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও এ ঘটনায় আহত হন।
কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেম উদ্দিন এ ঘটনায় কলারোয়া থানায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। থানা মামলাটি রেকর্ড না করায় একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তিনি সাতক্ষীরার আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
এ মামলা খারিজ হয়ে যাবার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এসময় তদন্ত করে পুলিশ তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়।