মোঃ কামাল হোসেন: বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রতোক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। অর্থাৎ কোন নাগরিক যদি তার কোন আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত হয় তাহলে সে আইন অনুসারে প্রতিকার লাভ করতে পারেন। আইনের আশ্রয় লাভের জন্য আমরা সাধারণত দেশে প্রচলিত আদালতে বা থানায় মামলা দায়ের করে থাকি। তেমনি ভাবে আমরা যদি কোন অপরাধের সাথে জড়িত হয় তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে ও মামলা দায়ের করা হয়। তবে আমাদের দেশে প্রায়শই দেখা যায় একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। পারিবারিক,সাংসারিক,সামাজিক, রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। বিশেষত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বা যৌতুক আইনে বা জমি নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় বেশি। মিথ্যা মামলা দায়ের করা আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। আসুন জেনে নিই হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করার শাস্তি কি-
১. বাংলাদেশ দন্ডবিধি অনুসারে শাস্তি
বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ২১১ অনুসারে ক্ষতিসাধনে জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য মামলাকারীর দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দন্ডে শাস্তি হতে পারে।
উক্ত ধারা অনুযায়ী যদি দায়ের করা মিথ্যা মামলা মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের জন্য দায়ের করা হয় তাহলে মামলা দায়েরকারীর সাত বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দন্ডে শাস্তি হতে পারে।
মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য শাস্তি:
বাংলাদেশ দন্ডবিধি ধারা ১৯৩ অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি বিচার বিভাগীয় মামলার কোন পর্যায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করেন তাহলে তার সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।
ধারা ১৯৪ অনুসারে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এরকম কোন মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা হলে তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে এবং মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের ফলে যদি কারো ফাঁসি কার্যকর করা হয় তাহলে ঐ ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড দন্ডিত হতে পারে।
২. ফৌজদারি আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার শাস্তি
ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ২৫০ অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি মিথ্যা,তুচ্ছ বা বিরক্তকর অভিযোগ দায়ের করেন তাহলে আদালত তাকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ অনাদায়ে ত্রিশ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন।
ঐ একই ধারায় আদালত মিথ্যা মামলা দায়েরকারীকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সবোর্চ্চ তিন হাজার টাকা জরিমানা করতে পারেন।
৩. দেওয়ানী কার্যবিধির অধীনে মিথ্যা দাবি বা জবাবের শাস্তি
দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ৩৫ক অনুসারে যদি কোন মামলায় কোন ব্যক্তি মিথ্যা বা বিরক্তকর দাবি বা জবাব প্রদান করে তাহলে আদালত তাকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন এবং এই আদেশের বাহিরে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা যেতে পারে উক্ত ধারা অনুযায়ী।
৪. বিশেষ আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার শাস্তি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার শাস্তি
আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার খবর প্রায়ই দেখা যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ১৭ অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে কারো বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাহলে তার সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
যৌতুক নিরোধ আইন অনুসারে মিথ্যা মামলা দায়ের করার শাস্তি
যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ এর ধারা ৬ অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা বা অভিযোগ করিবার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এছাড়াও অন্যান্য সব আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।তাই হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হতে বিরত থাকুন।
মোঃ কামাল হোসেন: সহকারী ব্যবস্থাপক (আইন), বিজিডিসিএল, কুমিল্লা।
Email- kamallawru@gmail.com