দেশের ৩৪ শতাংশ বিবাহিত কিশোরী মনে করে, স্ত্রী কথা না শুনলে স্বামী তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করার বা মারধরের অধিকার রাখে। ১৮ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরীর ভাবনাও এমনই।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ এডোলেসেন্ট হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং সার্ভে ২০১৯-২০’ জরিপে এ তথ্য জানানো হয়। এ দিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (নিপোর্ট) এর পরিচালনায় দেশব্যাপী চালানো এক জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। জরিপে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি-এর রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) প্রকল্প এবং ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার ডাটা ফর ইমপ্যাক্ট (ডিফরআই)।
কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে আনার উদ্দেশ্যে এই জরিপ পরিচালিত হয়। ৬৭ হাজার ৯৩টি পরিবারের মাঝে সফলভাবে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। মোট চার হাজার ৯২৬ জন বিবাহিত কিশোরী (৯৭ শতাংশ সাড়া প্রদান হার), সাত হাজার ৮০০ অবিবাহিত কিশোরী (৯৪ শতাংশ সাড়া প্রদান হার) এবং পাঁচ হাজার ৫২৩ অবিবাহিত কিশোরের (৮৫ শতাংশ সাড়া প্রদান হার) এই জরিপের আওতায় সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
জরিপের তথ্য সংগ্রহের মান নিশ্চিত করতে আইসিডিডিআর,বি ১৮ জন কর্মকর্তা এবং চারটি মান নিয়ন্ত্রণ টিমের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ, পরিবার ও ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের সময় তারা নির্দেশনা দেন।
জরিপের মূল প্রতিবেদনে কিশোর-কিশোরীর বিয়ে, ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি, জেন্ডার-সম্পর্কিত সামাজিক আচরণ, সহিংসতা, মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও খাদ্যবৈচিত্র, এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সংযোগ বিষয়ক ১২টি অধ্যায়ে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ বর্তমানে বিবাহিত এবং ৩ শতাংশ কিশোরীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে (স্বামীর থেকে পৃথক আছে অথবা বিধবা হয়েছে)। এই কিশোরীদের ১৭ শতাংশ বর্তমানে চার বছর বা অধিক সময় ধরে বিবাহিত। ৩০ শতাংশ কিশোরীর স্বামীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য কমপক্ষে ১০ বছর। জরিপে আরো দেখা যায়, সর্বোচ্চ সংখ্যক কিশোরী (৪৫ শতাংশ) যাদের স্বামীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য ১০ বছর বা তার বেশি, অর্থিকভাবে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
জরিপ ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর এডোলেসেন্ট হেলথ ২০১৭-৩০ তৈরি ও বাস্তবায়ন করছে। স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ এসব উন্নতি সাধন করলেও বাল্যবিবাহ, কৈশোরে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের হার এখনও বেশি। স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে বাল্যবিবাহ রোধ করা, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পর্যাপ্ত তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।
তিনি বলেন, স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের পরিবার থেকে একটা গাইডেন্স দরকার। পরিবারের বিরাট ভূমিকা থাকে তাদের গাইড করার। সঠিক পথে পরিচালনা করার দিকনির্দেশনা দেওয়ার। স্কুলে শিক্ষকদের দায়িত্ব তাদের গাইড করার। শিক্ষকদেরও তাদের প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে। ছেলেমেয়েরা ভুল করবেই, ভুল করেই শিখবে। ভুল না করলে শিখতে পারে না। শাস্তি দিয়ে কাজ হবে না, শাস্তি দেওয়াই বড় বিষয় না। বাবা-মা, বড় ভাই এবং শিক্ষকদের দেখতে হবে যে তারা কাদের সঙ্গে মিশছে। শিক্ষায় সব ধরনের শিক্ষাই দরকার। আমাদের ইতিহাস শিক্ষা খুব দরকার, তাহলে তারা বুঝতে পারবে কারা বন্ধু কারা শত্রু।
জরিপ ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মাদ আলী নূর, মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি-এর পপুলেশন হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন অফিসের পরিচালক জার্সেস সিধওয়া ও স্বাস্থ্য অধিদদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাসহ অন্যান্যরা।