হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকছে। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন- ২০২০ নিয়ে আয়োজিত ওয়েবিনারে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বর্তমানে প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী অনেকক্ষেত্রেই হিন্দু নারী ও মেয়েরা বাবা-মা ও স্বামীর সম্পত্তির অংশ পান না এবং তারা বাবা ও স্বামীর সম্পত্তিতে যে অংশটুকু পেয়ে থাকেন তা কোনওভাবেই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সমান অংশ নয়। আইনের এই অসম প্রেক্ষিতে সামনে রেখে সম্পত্তিতে হিন্দু নারী ও পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
আইনটি তৈরির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন এই খসড়া আইনে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষ ও হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ) ব্যক্তির সমান অধিকার এর কথা বলা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে গঠিত ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ’ কোয়ালিশন এই আইনটির খসড়া তৈরি করেছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এই কোয়ালিশনের সচিবালয়।
বর্তমানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যদি কারও পুত্র সন্তান থাকে, তাহলে কন্যা সন্তানরা তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি পায় না। তবে পুত্র না থাকলে পুত্র রয়েছে এমন কন্যারা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশ পেয়ে থাকে। যদিও নারীর অর্জিত সম্পত্তির অংশ তার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ঠিকই পেয়ে থাকেন।
এই খসড়া আইনে নারী-পুরুষ, পুত্র বা কন্যাসন্তান, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন অথবা বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে অসম বিভাজন করা হয়নি। অবশ্য কোনও ব্যক্তির নিজের অর্জিত সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে তার নিজের সম্পত্তি হবে এবং কোন কোন ব্যক্তি সম্পত্তির উত্তরাধিকারের যোগ্য হবেন না, সে বিষয়টিও সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের দিপালী চক্রবর্তী।
বর্তমান আইনে বিধবা নারীরা যে সম্পত্তি পান, তা তিনি বিক্রি বা উইল করতে পারেন না। ভারত ১৯৫৬ সালে ‘হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট’ পাশ করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে হিন্দু নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অংশ নিশ্চিত করেছে। পরবর্তীতে ২০০৫ ও ২০০৭ সালে তারা আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও যুগোপযোগী করেছে।