সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২২ মেয়াদের নির্বাচনে দুই দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শুক্রবার (১২ মার্চ) ভোট গণনার পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ৭ হাজার ৭২২ জন ভোটারের মধ্যে দুই দিনে ভোট দিয়েছেন ৫ হাজার ৬৭৬ জন আইনজীবী।
প্রতি বছরের মতো এবার রাতে ভোট গণনা থেকে বিরত থাকছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী আহ্বায়ক কমিটি। নির্বাচনী কমিটি শুক্রবার ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা সব প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়।
জানা যায়, আইনজীবীদের ভোটের বাক্স সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংক শাখার ভল্টে রেখেছেন নির্বাচনী আহ্বায়ক কমিটি। শুক্রবার (১২ মার্চ) সেখান থেকে নিয়ে ভোট গণনা করা হবে।
ভোট গণনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য বি এম ইলিয়াস কচি গত বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিবারই আইনজীবীদের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু করোনা ও সবার পরিশ্রমের কথা বিবেচনা করে ভোটগ্রহণ শেষে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার আমরা রাতে ভোট গণনা না করে শুক্রবার (১২ মার্চ) নামাজের পর বেলা আড়াইটা থেকে ভোট গণনা শুরু করবো। এরপর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত প্রার্থীদের পরামর্শে গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচনে ১৪ পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সাতটি সম্পাদকীয় পদ এবং সাতটি কার্যনির্বাহী সদস্য পদ রয়েছে। দাখিল করা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং প্রত্যাহার শেষে ৫০ জন চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাতটি সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে ২৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সর্বোচ্চ পদ সভাপতি হিসেবে পাঁচজন, দুটি সহ-সভাপতি পদের বিপরীতে ছয়জন, সম্পাদক পদে চারজন, কোষাধ্যক্ষ পদে চারজন এবং দুটি সহ-সম্পাদক পদের বিপরীতে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি সাতটি কার্যনির্বাহী সদস্য পদের জন্য ২৩ জন আইনজীবী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৭ সদস্যের যে সাব-কমিটি গঠন করা হয় তার আহ্বায়ক সাবেক বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান।
এই নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী ‘দলীয় প্যানেলে’ প্রার্থীদের পরিচয় দিয়ে ভোট চাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে ভোটারদের মুখে-মুখে ভিন্ন-ভিন্ন প্যানেল পরিচিতি ছিল। যেখানে আওয়ামীপন্থী প্রার্থীরা ‘সাদা প্যানেল’ হিসেবে এবং বিএনপিপন্থী প্রার্থীরা ‘নীল প্যানেল’ হিসেবে পরিচিতি।
এর বাইরে বিএনপিপন্থী ১৩ জন আইনজীবীর একটি ‘প্যানেল’ এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আর ৮টি পদে প্রার্থী দিয়েছেন প্রগতিশীল আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয় আইনজীবী জোট মনোনীত ‘লাল প্যানেল’। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে শুধুমাত্র সভাপতি পদে একজন প্রার্থী হয়েছেন।
আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেল
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া দুই সহ-সভাপতি পদে মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা ও মো. আলী আজম, সম্পাদক পদে আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল, কোষাধ্যক্ষ মো. ইকবাল করিম, দুই সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার সাফায়েত সুলতানা রুমি ও এ বি এম নুর-এ-আলম (উজ্জ্বল) প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও সদস্য পদে এ বি এম শিবলী সাদেকীন, মাহফুজুর রহমান রোমান, মো. সানোয়ার হোসেন, মিন্টু কুমার মণ্ডল, মো. সিরাজুল হক স্বপন, মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন।
বিএনপিপন্থী নীল প্যানেল
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব মো. ফজলুর রহমান, দুই সহ-সভাপতি পদে মো. জালাল উদ্দিন ও জয়নাল আবেদিন (তুহিন), সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), কোষাধ্যক্ষ পদে আব্দুল্লাহ আল মাহবুব, দুই সহ-সম্পাদক পদে মাহমুদ হাসান ও রাশিদা আলম ঐশী প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন- গোলাম আক্তার জাকির, মো. মনজুরুল আলম (সুজন), মো. শফিকুল ইসলাম, নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব, পারভীন কাওসার মুন্নি, রেদওয়ান আহমেদ রানজিব ও এস এম ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ প্রার্থী হয়েছেন।
বিএনপিপন্থী ‘বিদ্রোহী’ প্যানেল
এই প্যানেলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান এবং সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. ইসমাইল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান সম্রাট, সহ-সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট জুলফিকার আলী জুনু এবং অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ, সদস্য পদে অ্যাডভোকেট মো. শাফিউর রহমান, মো. মুনির হোসেন, অ্যাডভোকেট একেএম মুকতার হোসেন, একেএনএম ওয়ালিউল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহিদ উদ্দিন, মো. আকবর হোসেন ও নাজমুল হাসান প্রার্থী হয়েছেন।
লাল (রেড)প্যানেল
এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে কে এম জাবির, সম্পাদক পদে মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি পদে নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. বদিউজ্জামান তপাদার, সহ-সম্পাদক পদে মো. সাজ্জাদ হোসাইন, সদস্য পদে শাহিদুল হক, এস কে এম আনিসুর রহমান খান, জহিরুল আলম বাবর প্রার্থী হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ।
এর আগে ২০২০-২১ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেল থেকে আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন দ্বিতীয় বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর প্রথমবারের মতো সমিতির সম্পাদক হয়েছিলেন বিএনপিপন্থী নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস।
গত বারের নির্বাচনে মোট ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতিসহ ছয়টি পদে সাদা প্যানেল এবং সম্পাদকসহ আটটি পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।