পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় দায়িত্বরত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী ১৫ এপ্রিল মামলার কেস ডকেটসহ তাকে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মামলার সন্দেহভাজন আসামি আবুল কালাম ওরফে আবুকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
সোমবার (১৫ মার্চ) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
উল্লেখ্য,২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে নুরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। পরদিন সকালে পুঠিয়ার একটি ইটভাটা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সেদিনই তার মেয়ে নিগার সুলতানা আট জনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসির কাছে একটি এজাহার দেন।
সেই এজাহারে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে পুঠিয়ার ওসির অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এ কারণে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ড না করে নিগার সুলতানাকে তা সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় এজাহার দাখিল করেন। তখন এজাহারটি গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা থেকে এজাহার ও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপি সংগ্রহ করে দেখেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের নাম-ঠিকানা লেখার কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লেখা আছে।
এছাড়া তার উল্লেখ করা আট জন আসামির পরিবর্তে সেখানে ছয় জনের নাম আছে। অথচ তিনি পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানাসহ আট জনকে আসামি করেছিলেন। নিগার সুলতানা এই বিতর্কিত এজাহারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘এজাহার বদলে দিলেন ওসি’ শীর্ষক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকের প্রতিবেদন যুক্ত করে এই রিট করা হয়। ওই রিটের পর একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুলও জারি করেন আদালত।
ওই আদেশের পর রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনা তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় ওসি সাকিল উদ্দিনসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা দায় এড়াতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয়।
পরে ওই রিটের ওপর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা/সংস্থাকে অবিলম্বে কেস ডকেট পিবিআই’র কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান রিপোর্ট ও অনুসন্ধান কাজে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায় অনুসারে, সম্প্রতি পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এরইমধ্যে ওই মামলার সন্দেহভাজন আসামি আবুল কালাম ওরফে আবুকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৫ জানুয়ারি বিচারিক আদালতে আবু জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করেন। এর বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন জানান।