উচ্চ ও নিম্ন সব আদালতে যারাই রায় বা আদেশ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে যুবলীগ নেতাসহ জালিয়াতি করে বগুড়ায় ৩০ আসামি জামিন নিয়েছেন এ বিষয়ে প্রতিবেদন না দেয়ায় বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে (সিজিএম) শোকজ করে আদেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে ১৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেজন্য এটি খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ কথা বলেন।
বগুড়ার ৩০ আসামির জামিন জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ এবং প্রতিবেদন দিতে বলেন আদালত। আজ এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
শুনানিতে বেঞ্চ বলেন, ‘রুলে আমরা যে নির্দেশ দিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী আপনারা আমাদের অবগত করেননি। আপনারা কি কোনো তথ্য পাননি। নাকি আমাদের নির্দেশনা পর্যন্তই শেষ হয়ে যাবে।’
তখন রেজিস্টার জেনারেল বলেন, ‘এই নির্দেশনার বিষয়ে আমাদের নজরে সেভাবে আসেনি। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। একটু সময় দেন আমরা আদেশ প্রতিপালন করব।’
আদালত বলেন, ‘একটা ভুয়া আদেশ নিয়ে তারা জামিন নিল। সিজিএমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম বিষয়টি নিশ্চিত করতে। তিনি আমাদের নিশ্চিত করেননি। তিনি কেন জানালেন না তাকে আমরা শোকজ করব। আপনারা (রেজিস্টার জেনারেল) জেনে আগামী ১৮ মার্চ আমাদেরকে জানাবেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আদেশ দেব।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘আমাদের কাছে যে ডকুমেন্ট আছে তাতে দেখা যায়, গত ১ তারিখে আপনাদের কাছে তারা সার্ভ (সরবরাহ) করেছেন। আপনাদের উচিত ছিল সাত দিনের মধ্যে দেয়া। সিআইডি থেকে রিপোর্ট এসেছে। সুদূর বগুড়া থেকে এসেছে। আর আপনারা কাছাকাছি থেকেও সেটি করছেন না।’
কোর্ট আরও বলেন, ‘মামলাটি অনেক জটিল। এ ধরনের আজকেও একটি মামলা বের করেছি। যেখানে বার বার আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা আউট অব লিস্ট করেছি। আবার নিয়ে এসেছে বাই দিস টাইম দেখা যাচ্ছে ওই দিক দিয়ে আসামি বের হয়ে চলে গেছে। অনেক জটিল মামলা। লিস্টে আসে শুনানি করে না। পরবর্তীতে দেখা যায়, ওই দিকে বেইল (জামিন) হয়ে বেরিয়ে যায়। এ রকম যে অহরহ চলছে তা প্রতিরোধ করতে আমাদের সকলের প্রচেষ্টা দরকার।’
আদালত বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ জাল হচ্ছে, নিম্ন আদালতের স্বাক্ষর জাল হচ্ছে। নিম্ন আদালতের আদেশ টেম্পারিং করে আমাদের কাছে আনছে। আপিল বিভাগের এখনও হইছে কিনা আমাদের জানা নাই। এ ধরনের কাজে যারা যুক্ত তাদের খুঁজে বের করা জরুরি প্রয়োজন। যাতে পরবর্তীতে আর এ রমক ঘটনা না ঘটে।’
এ সময় আসামিদের পক্ষে আইনজীবী মিনহাদুজ্জামান লিটন আদালতকে বলেন, ‘এ মামলার যারা আসামি তারা আদেশ পাওয়ার পর পরই আত্মসমর্পণ করেছেন। ৩ মার্চ ১৪ জন এবং বাকী ১৬ জন ৪ মার্চ আত্মসমর্পণ করেন।’
আসামিরা ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলেও একটি আবেদন করেছেন বলেও তিনি জানান।
আদালত বলেন, ‘আপনি বলছেন আত্মসমর্পণ, কিন্তু পুলিশ রিপোর্টে বলছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’
এরপর আদালত বলেন, ‘আপনি কে? তখন আইনজীবী বলেন, তারা (আসামিরা) আমাকে ওকালতনামা দিয়েছেন। আমি তাদের পক্ষে।’
পরে আদালত বলেন, ‘আপনি যথাযথ প্রক্রিয়ায় আসেন।’
একটি মামলায় ভুয়া আগাম জামিননামা তৈরির ঘটনায় বগুড়া সদর উপজেলার আমিনুর ইসলাম, আব্দুল আলিম, আনোয়ার মণ্ডলসহ ৩০ জনকে গ্রেফতার করতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশের ৭ দিনের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করতে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়। এছাড়া বিষয়টি তদন্ত করতে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকেও নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে এ মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের নাম উল্লেখ করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জামিন পান আমিনুর ইসলামসহ ৩০ আসামি। কিন্তু ওই দিন এই কোর্ট থেকে এমন কোনো জামিনাদেশ হয়নি। এমনকি সেখানে আইনজীবীদের যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০ ফেব্রুয়ারি প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। তার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের ছোট ভাই মশিউল আলম দীপন বাদী হয়ে আমিনুর ইসলামকে প্রধান করে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ মামলায় জামিন জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।