বর্তমানে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে গিয়েছে আরও একধাপ। এখন মোবাইলভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমেই নারী ও শিশুরা পাবে তাৎক্ষণিক সেবা ও নিরাপত্তা। মোবাইলভিত্তিক অ্যাপটির নাম ‘ঈগল বিডি পুলিশ’ (Eagle BD Police)। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের সার্বিক সহযোগিতায় এটি তৈরি করেছে আইটি প্রতিষ্ঠান ব্যাকডোর প্রাইভেট লিমিটেড।
ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই অ্যাপটি দিতে পারে কাঙ্খিত সেবা। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে শুধু চালু করতে হবে অ্যাপটি তাহলেই ভুক্তভোগীর সিম থেকেই টহলরত পুলিশের ফোনে স্বয়ংক্রিয় সিগনাল যাবে।
এ ছাড়া অনাখাঙ্খিত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শুধু অ্যাপটি ওপেন করে কোন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিলেই নির্দিষ্ট বাটনে চাপ দিলেই বিপদবার্তা চলে যাবে কাছাকাছি ডিউটিতে থাকা পুলিশের ফোনে। বেজে উঠবে অ্যালার্ম। এইক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ফোনে লোকেশন অন থাকলে কাজটা আরও সহজ হবে। ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গে হাজির হবে পুলিশ।
আর যদি কোনও কারণে টহলরত পুলিশ কলটি ধরতে না পারেন, সেক্ষেত্রে সংকেত চলে যাবে পাশের থানার ওসির ফোনে। তিনিও যদি ধরতে অপারগ হন তবে তা পৌঁছে যাবে সরাসরি আইজিপির কাছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও অ্যাপটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযোগও আসতে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মজীবী নারীদের রাতে বাড়ি ফেরা এবং শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করবে ঈগল বিডি পুলিশ। আবার অ্যাপটির যাতে অপব্যবহার না হয় সেজন্য ব্যবহারকারীকে নিবন্ধন করে নিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে। যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তাদের ক্ষেত্রে নিবন্ধন করতে হবে অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে। আপাতত নারী ও শিশুদের জন্যই নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকছে অ্যাপটিতে।
৯৯৯ জরুরি সেবায় ফোন করে কিছু তথ্য দিতে হয়। যা অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে সম্ভব হয় না। ঈগল বিডি পুলিশ অ্যাপে মোবাইলের স্ক্রিন স্পর্শ করলেই পুলিশি সহায়তা মিলবে বলে জানিয়েছে অ্যাপ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
প্রাথমিকভাবে মোবাইল ব্যবহারকারীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এলাকার ৫১টি থানায় এই সেবা পাবে। এরইমধ্যে ৫১টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও এসআইদের অ্যাপটি সম্পর্কে ধারণা দিতে কয়েকটি কর্মশালা হয়েছে। পরবর্তিতে দেশব্যাপী বিভিন্ন থানায় অ্যাপটির প্রচারণার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়াও অ্যাপটির বিশেষ ব্যবস্থা হিসাবে থাকছে পরিবারের তিনজন সদস্যের নাম্বার নিবন্ধন। জরুরি প্রয়োজনে এই অ্যাপ জরুরি নম্বর হিসেবে নিবন্ধন করা পরিবারের তিনজন সদস্যের নম্বরেও পাঠিয়ে দেবে বিপদসংকেত।
ব্যাকডোর প্রাইভেট লিমিটেডের আরএন্ডডি প্রধান নুরফাত মাহবুবা গণমাধ্যমকে বলেন, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে বেশ সচেতন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ধরনের একটি অ্যাপ নির্মাণের সঙ্গে থাকতে পারাটা আমাদের জন্য গর্বের। নারী ও শিশু নিরাপদ থাকলে এর সুফল রাষ্ট্র পাবে। পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব স্মার্টফোনে ইনস্টল করতে হবে অ্যাপটি।
ব্যাকডোর প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর হাসান জোহা গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে অ্যাপটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কয়েক ধাপে নাম বদলের পর রাখা হয় ঈগল বিডি পুলিশ অ্যাপ। আপাতত শুধু অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারবে বিনামূল্যে। আইওএস (আইফোনে) ফোনগুলোর উপযোগী করার কাজ এখনও প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, অ্যাপটির কার্যক্রম বিষয়ে ডিএমপির (ক্রাইম) বিভাগের উপকমিশনার, কমিশনার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শক (তদন্ত), পরিদর্শক (অপারেশন), এসআইদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশনায় এরইমধ্যে সীমিত আকারে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অচিরেই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে।
অ্যাপটির পরবর্তী ধাপে থাকবে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আরও কিছু আপডেট। তখন অ্যাপটি ওপেন করলেই ব্যবহারকারীর ফোনের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে বলে জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা।
অ্যাপটিতে রেজিস্ট্রেশন করবে কিভাবে :
গুগল প্লে স্টোর থেকে Eagle BD Police অ্যাপটি ইন্সটল করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নম্বর, নাম-ঠিকানা, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করে নিতে হবে। এরপরই ব্যবহার করা যাবে অ্যাপটি।
অ্যাপটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু না করলেও সহায়তা পাচ্ছেন অনেকে। এরইমধ্যে ৬৫টি ঘটনার তথ্য সার্ভারে জমা হয়েছে। সবগুলোতেই সহায়তা পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, গতবছরের শেষের দিকে কাফরুল থানায় অ্যাপটির মাধ্যমে সহায়তা চান এক তরুণী। অভিযোগ পেয়েই রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকা থেকে তরুণীর অবস্থান শনাক্ত করে তাকে উদ্ধার করা হয়।