মিয়ানমারে গত শনিবার সেনাবাহিনীর গুলিতে শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ যখন এই হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, তখন ওই দিনই মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জমকালো পার্টিতে আনন্দে মেতেছিলেন দেশটির জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং ও ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা। খবর বিবিসির।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিয়ানমারের সরকারি টিভির শেয়ার করা ছবিতে দেখা গেছে, মিন অং হ্লাইং সাদা রঙের ইউনিফর্ম পরে আছেন। গলায় টাই বাঁধা। লালগালিচায় তাঁকে হাঁটতে দেখা গেছে। তাঁর মুখে ছিল হাসি। নৈশভোজের জন্য সবার সঙ্গে বড় একটি টেবিলে বসেছিলেন তিনি।
সেনাবাহিনীর এই জমকালো পার্টির ছবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মিয়ানমারের বিক্ষোভকারী মং জার্নিও তাঁদের মধ্যে একজন।
টুইটার ব্যবহারকারীদের অনেকেই সেনাবাহিনীর গুলিতে হতাহত ব্যক্তিদের ছবির পাশে জমকালো ওই পার্টির ছবি দিয়ে টুইট করেন। এই পার্টির আগে সেনাবাহিনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে মিং অং হ্লাইং ‘গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে চান’ বলে বক্তব্য দেন। সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেন।
গত শনিবার ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের বার্ষিকী। ওই দিন কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিলাসবহুল পার্টির আয়োজন করে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এসব উৎসব আয়োজনের দিনে দেশটিতে বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১১৪ জন নিহত হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রধানেরা গতকাল রোববার সেনাবাহিনীর যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংস আচরণের নিন্দা জানান। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর কাজ মানুষের জীবন রক্ষা করা। মানুষের জীবনের ক্ষতি করা নয়।
যুক্তরাজ্য সরকার মিয়ানমারে থাকা সে দেশের সব নাগরিককে যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমার ছেড়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছে।
রয়টার্সের খবরে জানা যায়, গতকাল বাগো শহরে নিহত বিক্ষোভকারীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী এক নারী জানান, নিরাপত্তাবাহিনী ওই অনুষ্ঠানে ঢুকেই গুলি চালায়।
১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ৪০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমারে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের নেত্রী অং সান সু চি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন। ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখল করে।
সূত্র : প্রথম আলো