দেশজুড়ে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণার পর তা কার্যকর করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে এ বিষয়ে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বয় করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউন কার্যকর করতে তারাও প্রস্তুত রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে লকডাউন কার্যকর করতে বলা হবে সেভাবেই কাজ করা হবে। একইসঙ্গে লকডাউনের সময় অসাধু ব্যক্তিরা যেন কোনোভাবেই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে না পারে সে বিষয়েও গোয়েন্দা নজরদারি করা হবে।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, লকডাউন কার্যকর করতে আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে লকডাউন কার্যকর করতে বলা হবে সেভাবেই মাঠের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। বিশেষ করে চলাচলে কতটা কড়াকড়ি করা হবে তা নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিপালন করা হবে। এছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের প্রবেশমুখ ও বের হওয়ার রাস্তাগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হবে। যাতে শহরের ভেতরে অকারণে সাধারণ মানুষের প্রবেশ ও বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আগের মতোই সাধারণ মানুষের মুখে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন শহরের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে বন্ধ করা এবং যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর দেওয়া হবে। তবে জরুরি পরিসেবা বিশেষ করে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বা অন্যান্য গাড়িসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত পরিবহনগুলোকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। যে নির্দেশনা দেওয়া হবে তা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হবে।’
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও কীভাবে তা কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও বিভিন্ন কল-কারখানা সীমিত আকারে খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। কল-কারখানা খোলা রাখলে কর্মজীবীরা কীভাবে কর্মস্থলে যাবেন বা তাদের কীভাবে শনাক্ত করা যাবে তা একটি জটিল বিষয়। একারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়ার পর তা কার্যকর করতে কর্মপরিকল্পনা সাজানো হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, লকডাউনের সময় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পণ্যের সংকট দেখিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা আয়ের জন্য অসৎ পরিকল্পনা করে থাকে। বিষয়টি নিয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বাজার মনিটরিং করে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘লকডাউন চলাকালে জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। আর শিল্প-কলকারখানা খোলা থাকবে। যাতে করে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং বিভিন্ন শিফটিং মাধ্যমে তারা কাজ করতে পারে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই লকডাউনের করণীয় বা বিধি-নিষেধ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন হতে পারে। এই প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা লকডাউন কার্যকরের কর্মকৌশল ঠিক করবেন।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশের আগের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যে নির্দেশনা আসবে সেভাবেই লকডাউন কার্যকর করা হবে। মানুষকে সচেতন করে যতটা জনসমাগম সীমিত করা যায় ততটাই করা হবে।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর করতে র্যাব আগের মতোই কাজ করবে। মানুষের মুখে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ পেট্রলিং ও চেকপোস্ট বসিয়ে লকডাউন কার্যকর করা হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজটিও করা হবে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, লকডাউনের সময় অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থের জন্য সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলতে বা পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে চায়। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে নজরদারি চালিয়ে যাবেন।’
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন