মোঃ রায়হান আলী:
খোদার পরেই পিতা-মাতার অবস্থান। কতই না কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে মানুষের মত মানুষ গড়ে তোলে পিতা-মাতা। পিতা-মাতার ঋণ কোন দিন সন্তান পরিশোধ করতে পারে না। এটা অপরিশোধিতই থেকে যায়। সংসারের সর্বস্ব বিসর্জন দিয়েও উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলছে সন্তানকে অনেক পিতা-মাতা। আজকাল খবরের কাগজে হর হামেশাই এমন খবর পাওয়া যায় যে রাতের আধারে অসুস্থ বৃদ্ধা মা কিংবা বাবাকে যত্রতত্র ফেলে দিয়ে গেছে সন্তান। এমনকি অহরহই দেখা যায় এবং অভিযোগ পাওয়া যায় গ্রামে, গঞ্জে, শহর নগরে পিতা-মাতার আদরের সন্তানটি বড় হয়ে আজ পিতা-মাতাকে সংসারের বোঝা মনে করে ভরণ-পোষণ প্রদানে গড়িমসি করছে। সন্তান ছোট অবস্থায় যেমন অবুঝ থাকে তেমনি পিতা মাতাও বৃদ্ধ হলে অসহায় হয়ে পড়ে। আর এই অসহায় পিতা-মাতাকে যখন সন্তানরা ভরণ-পোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানায় কিংবা অবহেলা করে তখন এই পিতা-মাতা সন্তানদের বিরুদ্ধে নিতে পারে আইনী পদক্ষেপ।
চলুন দেখি পিতা মাতার ভরণ-পোষণ আইন,২০১৩ তে কি বলা আছে-
এই আইনের
৩(১) ধারায় বলা আছে-প্রত্যেক সন্তাকে তাহার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিতে হইবে।
৩(২) কোন পিতা মাতার একাধিক সন্তান থাকিলে সেই ক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করিয়া তাহাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবে।
৩(৩) এই ধারার অধীনে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা মাতার একই সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করিতে হইবে।
৩(৪) কোন সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাহার বা ক্ষেত্রমত তাহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করিতে বাধ্য করিবে না।
৩(৫) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখিবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করিবে।
৩(৬) পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে সন্তান হইতে পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেই ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাহার বা ক্ষেত্রমত তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে হইবে।
৩(৭) কোন পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে সন্তানদের সহিত বসবাস না করিয়া পৃথকভাবে বসবাস করিলে সেইক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাহার দৈনন্দিন আয়-রোজগার বা ক্ষেত্রমত মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় হইতে যুক্তিসঙ্গত পরিমান মতো অর্থ পিতা বা মাতা বা ক্ষেত্রমত উভয়কে নিয়মিত প্রদান করিবে।
♦ পিতা মাতার ভরণ-পোষণ আইন,২০১৩ এর ৪ ধারায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে-
পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী,নানা-নানীর ভরণ-পোষণ:
প্রত্যেক সন্তান তাহার-
(ক) পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদীকে এবং
(খ) মাতার অবর্তমানে নানা-নানীকে
ধারা ৩ এ বর্নিত ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে এবং এই ভরণ-পোষণ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ হিসেবে গণ্য হইবে।
♦ পিতা মাতার ভরণ-পোষণ আইন,২০১৩ এর ৫ ধারায় পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ না দিলে নিম্নোক্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে-
আইনের ৫ ধারা পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করিবার দন্ডঃ-
(১) কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ৩ এর যে কোন উপ ধারার বিধান কিংবা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১(এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে; বা উক্ত অর্থদন্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩(তিন)মাস কারা দন্ডে দন্ডিত হইবে।
সন্তান যদি প্রচলিত আইন অনুসারে পিতা-মাতা বা দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানিকে ভরণ-পোষণ না দেয় তাহলে ভুক্তভোগী কিংবা পিতা-মাতা তিনটি সংস্থার যেকোনো একটিতে অভিযোগ দিতে পারেন- স্থানীয় থানা, নিকটস্থ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে।
লেখকঃ মোঃ রায়হান আলী ,শিক্ষানবিশ আইনজীবী, খুলনা।