আব্দুল মতিন খসরু, যিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলেন। যার কর্মময় জীবনের সূচনা হয় ১৯৭৮ সালে কুমিল্লায় জজকোর্টে যোগদান করার মাধ্যমে। পরবর্তীতে ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নিয়মিত প্র্যাকটিস করা শুরু করেন। এই মহান মানুষটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং সেই সাথে তিনি ছিলেন কুমিল্লা জেলার অবিভক্ত বুডিচং থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
এই গুণী মানুষটির বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টসহ আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা ডি.এল.আর (DLR) সহ বিভিন্ন ‘ল’ জার্ণালে প্রকাশিত হয়েছে।
আইনপেশার পাশাপাশি তিনি জাতীয় রাজনীতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য ছিলেন এবং এর পূর্বে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে সফলভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের থানা ও জেলার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ( ১৯৯১-১৯৯৬, ১৯৯৬-২০০১, ২০০৯-২০১৪, ২০১৪-২০১৮ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ, ৫ (পাঁচ) বার জাতীয় সংসদ সদস্য (এম.পি) নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে দেশ গঠনে অত্যন্ত সফলতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইনমন্ত্রী থাকা কালে ১৯৯৬ সালে সংবিধান ও মানবতা বিরোধী কালো আইন ইনডেমনিটি (Indemnity Odinance) অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যবস্থা করেন, যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা সম্ভবপর হয়ে উঠে।
আব্দুল মতিন খসরু ২০০০ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত African-Asian Legal Conference of the Asian Political Parties Consultative Committee (AALCC) সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এরপর তিনি ২০১০ সালে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান রাজনৈতিক দল সমূহের সংগঠন International Conference of Asian Political Parties( ICAPP) এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং সেই একই সম্মেলনে কম্বেডিয়ার প্রধানমন্ত্রী সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সাথে অসম্ভব এই মেধাবী মানুষটি Member Standing Committee of ICAPP এর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০১৩ সাল থেকে চীনে অনুষ্ঠিত International Ecological Safety Collaborative Organisation(ICAPP) এর সম্মেলনে Senior Advisor and Deputy Director of Legal Affairs Committee নির্বাচিত হয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০০০ সালে আইনমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি অসহায় ও গরীব বিচারপ্রার্থী মানুষের কথা বিবেচনা করে তাদের আইনগত সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে `Legal Aid Act’ প্রণয়ন ও পাশ করেছিলেন। যা আইনাজ্ঞনে এক অনন্য নজির হিসাবে বিদ্যমান রয়েছে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আমূল সংস্কার ও যুগোপযোগী করার লক্ষে তিনি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় Bangladesh Legal Aid Capacity Building Project এর নামে ২০০ (দুইশত) কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেন। তাছাড়াও তিনি আইনমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় সুপ্রীম কোর্ট এনেক্স ভবন সহ সারা বাংলাদেশে বিচারালয়ের অবকাঠামোগত একাধিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
সর্বশেষ জাতির এই সূর্যসন্তান গত ১০ ও ১১ মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১২ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় সমিতির সভাপতি হিসেবে আপন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
যার মৃত্যুর পূর্বেও এক কর্মব্যস্ত জীবনের সূচনালগ্নের এই বিরল উদাহরণে তিনি বেঁচে থাকবেন আপন কর্মের মাঝে কোটি মানুষের হৃদস্পন্দনে।
• ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট