বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নতুন বাজেট। খাত তিনটি হচ্ছে- স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, নতুন বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থাকছে। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বরাদ্দের অতিরিক্ত। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল নতুন বছরে তা ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
‘কোভিড ১৯ সহজেই যাবে না’ এমন চিন্তা মাথায় নিয়েই বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখছে সরকার।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বহুদিন উৎপাদনের চাকা ঘোরেনি। নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছে। বেড়েছে কর্মহীনের সংখ্যা। আর তা বিবেচনায় রেখেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আকার বেড়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে অনেক মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) কার্যক্রম চালানো হয়। এর জন্য চালের প্রয়োজন। বোরোর উৎপাদন ভালো হয়েছে, তবে আগামীতে আমনের ফলন কেমন হবে তা আগাম বলা যাচ্ছে না। তাই প্রয়োজন হতে পারে চাল কেনার। এ কারণে সরকার এ বছর খাদ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করছে বাজেট। যার ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ পাচ্ছে খাদ্য খাত। সব মিলিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় পাচ্ছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। কারণ, খাদ্যের মজুত কম ছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন ‘টিআর-কাবিখা’র মতো কর্মসূচিতেও খাদ্য সরবরাহ করা যায়নি। সরকারের এসব কর্মসূচি চলেছে টাকার বিনিময়ে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এ বছর সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। এমনিতেই বছরে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসছে বাজেটে তা আরও বাড়ানোর চিন্তা আছে সরকারের।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, যোগ্যদের ৪৬ শতাংশ এখনও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে। আবার এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে স্বচ্ছলরাই ভাতা পান ৭৫ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের চেয়ে নতুন বছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২৪ শতাংশ। দুই দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যারা, তাদের জন্যই মূলত বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, এতে করে বাড়বে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য জীবনমান উন্নয়ন ভাতাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্যভাতা ও দুর্যোগ খাতের পরিধি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা এখন ৮৮ লাখ। এরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আট ধরনের ভাতা পান। এ বছর দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় দরিদ্র ও প্রবীণদের ভাতা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ভিজিএফ, ভিজিডি, টিআর, কাবিখাসহ খাদ্য মন্ত্রণালয় ১১টি কর্মসূচি চলমান। এই তালিকায় আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপবৃত্তি কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচিও।
করোনার অভিঘাতে যারা কাজ হারাচ্ছেন, তাদের এসব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদই দিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তারই প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আগামী বাজেটে। যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে যোগ হচ্ছে বাড়তি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সুত্র জানিয়েছে, গত ১২ মে পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মজুত আছে ৬ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। গম রয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে আমনের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় ১২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার।
এপ্রিল পর্যন্ত ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। অতিরিক্ত আরও তিন লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলওআই (লেটার অব ইনটেন) প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়াধীন।
উল্লেখ্য, সরকারের এই মেয়াদে তৃতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে সরকারের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, এ বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিপিপি) পরিমাণ ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।