মুক্তমত প্রকাশের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কতটা ‘নিরাপদ’ তা নিয়ে রয়েছে দীর্ঘ বিতর্ক। তবে সে বিতর্ককে পর্যালোচনায় নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে সরকার। সেক্ষেত্রে বিশেষ এই আইন দ্বারা যেন নাগরিকদের সাংবিধানিক বা মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয় সে বিষয়টিকেই সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার নিয়ে কারাগারে থাকা লেখক মুশতাক আহমেদকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিলো ক্ষোভ-বিক্ষোভের। এই আইনেই গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো তাকে। তবে এরপরও আইনের কোনও ধারা কিংবা উপধারায় আসেনি কোনও পরিবর্তন বা সংশোধন। সে সময়ে (গত ৫ মার্চ) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ এ আইনের অপব্যবহার বা অপব্যবহার কীভাবে বন্ধ করা যায়, সরকার সেই চেষ্টা করছে।’
আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়েছে। এতদিনে আইনটি ‘নিরাপদ’ করতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে মুঠোফোনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আলাপ হয়।
আইনটির বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আনিসুল হক গণমাধ্যমকে জানান, ‘আইনটির যেন অপব্যবহার না হয় এবং মানবাধিকার যেন ক্ষুণ্ণ না হয়- সেজন্য সরকার কাজ করছে।’
জানা গেছে, আইনটি নিয়ে সরকারের কাজের অংশ হিসেবে এবং আইনটির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের জেনেভাস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সে প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা আলোচনা করেছি। আরও আলোচনা করবো। উভয়পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে একটি ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।
এদিকে আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পর্যালোচনা করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানান আনিসুল হক। হিউম্যান রাইটস কমিশন, আইসিটি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ওই টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। চলমান লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টিমটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবেন। একইসঙ্গে কিভাবে আইনটির ‘বেস্ট প্রাকটিস’ করানো যায় সে বিষয়ে টিম তাদের মতামত তুলে ধরবেন।
সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে আইনটির ব্যবহার নিয়ে যা ভাবছে সরকার:
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। ফলে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করেও অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে এই আইন প্রণয়ন করে সরকার। বিভিন্ন সাংবাদিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থার আপত্তি সত্ত্বেও ২০১৮ সালে আইনটি প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে এই আইনটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই বেশি ব্যবহার করা হয়।
আর্টিকেল নাইনটিন-এর তথ্য মতে, ২০১৮ সালে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকসহ মুক্তচিন্তা চর্চাকারীদের বিরুদ্ধে ৭১টি মামলা হয়েছে। ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় ৬৩টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪৫ টি মামলা হয়েছে৷ যার অধিকাংশই সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে।
আইনটি সাংবাদিকতা বিরোধী কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আইনটি ব্যবহার করে সম্প্রতি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা-হয়রানি বন্ধ হয়ে এসেছে। সাংবাদিকদের জামিন বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আইনটি আরও পরিমার্জন করা হবে। অনন্তকাল ধরে তো আর এটা চলবে না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে গঠিত পর্যালোচনা টিম নিয়ে আশাবাদও ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, শিগগিরই তারা হয়তো আইনটির বিষয়ে ভালো কোনও পর্যালোচনা তুলে ধরবেন। আমি এমনটাই আশা করছি।