চট্টগ্রামে এক দুদক কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে রিট আবেদনকারীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় আদেশ না হওয়ার পর সে বিষয়ে উকিল সনদ দিয়ে সংবাদ প্রকাশের ঘটনা অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আগামী ২৬ আগস্ট ওই রিটকারীকে হাজির করতে তার আইনজীবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিট আবেদনটি করেছিলেন শহিদুল ইসলাম লিটন নামে এক ব্যক্তি।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
গত ৩১ জুলাই ‘হাইকোর্টের আদেশ সেই দুদক কর্মকর্তার বদলির আদেশ স্থগিত’ শিরোনামে চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাজহারুল হকের দেওয়া এক ল’ইয়ার সার্টিফিকেট থেকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের বদলির আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য তাকে স্বপদে বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত সোমবার বিষয়টি নজরে আসার পর আদালত বলেন, দুর্নীতি দমন কশিনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের বদলির ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি।
হাইকোর্টের আদেশ না হওয়া সত্ত্বেও বদলিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে—এমন খবর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে সংশোধনী প্রকাশ এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দুদকের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, চট্টগ্রামের পূর্বকোণ পত্রিকা সংশোধনী ছেপেছে। আদেশের সার্টিফায়েড কপিটি আমার মনে হয় জাল। তার কারণ জজ সাহেবের নামও ভুল লিখেছে।
তখন আদালত বলেন, এটা জাল হয়ে থাকলে এর দায়ভার পিটিশনারকে নিতে হবে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার আদেশ হবে। আরও যদি কোন তথ্য থাকে তাহলে দেন। কারণ এটা ধরে নিতে হবে পিটিশনার এবং তার আইনজীবী এটা করেছেন।
দৈনিক পূর্বকোণ ছাড়াও মহানগর চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার নিউজে এসেছে বলে জানান দুদকের আইনজীবী। তখন আদালত বলেন, আপনি সবগুলোতে যোগাযোগ করেন। আপনার অফিস থেকে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন।
দুদক আইনজীবী বলেন, আমি দুদককে জানিয়েছি। কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, যদি এই নিউজ বা রিটের পেছনে দুদকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ইন্ধন থাকে দুদক তার নিজস্ব ইনটেলিজেন্সির মাধ্যমে খতিয়ে দেখছে। এরপরও আদালত যে নির্দেশ দেবে সে অনুযায়ী দুদক পদক্ষেপ নেবে।
সেই অনুসারে বৃহস্পতিবার দুদকের আইনজীবী আদালতে বলেন, অন্য যারা নিউজ ছেপেছে তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে, ক্ষমা চেয়েছে। উকিল সনদে বিচারপতির নামের বানান ভুল। সুপ্রিম কোর্টের কোনো উকিল এ ভুল করতে পারেন না। তবে আইনজীবী মাজহারুল হক জানিয়েছেন, তিনি এ সনদ দেননি। তাই এটি জাল মনে হচ্ছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
তখন আদালত বলেন, রিট করেছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার একটি মানবাধিকার সংগঠনের সভাপতি। কিন্তু ঠিকানা দেখছি মতিঝিলের। বিষয়টি সন্দেহজনক হতে পারে।
এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, দুদক তার কোনো কর্মকর্তাকে কোথায় বদলি করবে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে জনস্বার্থে রিট হবে কীভাবে?।
এরপর আদালত রিটকারীকে হাজির করতে নির্দেশ দেন। এছাড়া ঘটনা অনুসন্ধানে দুদককে নির্দেশ দেন।