জাপানি মা, তার দুই শিশু সন্তান এবং তাদের বাংলাদেশি বাবাকে একসঙ্গে ১৫ দিন থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সময় সেই নারী ও তার দুই সন্তান কোথায় একসঙ্গে থাকবে এ বিষয়ে আপত্তি উঠলে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোর্ট কি বাসা খুঁজতে বের হবে?’ এদিকে শুনানিকালে হাইকোর্টকে আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জানিয়েছেন, বাবার সঙ্গেই থাকতে চান দুই শিশু।
উভয় পক্ষের শুনানিকালে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চকে আইনজীবী এসব তথ্য দেন।
আদালতে বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে রিটকারী জাপানি নারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এদিন প্রথম ধাপের শুনানির একপর্যায়ে আদালত খাস কামরায় শিশু দুটির বক্তব্য শোনেন। প্রায় আধঘণ্টা দুই শিশুর বক্তব্য শোনার পর তারা সিআইডি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে কামরার বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তারা দৌড়ে বাবাকে গিয়ে আবেগঘন হয়ে জড়িয়ে ধরে। তবে একই সময়ে শিশু দুটির মা পাশেই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এদিকে মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য উঠলে আদালত দুই পক্ষকে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
এরপর দুপুরে পুনরায় শুনানিকালে অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ আদালতকে বলেন, বাচ্চারা রাতে একলা থাকতে চায় না। মায়ের সঙ্গে বাচ্চারা থাকা নিয়ে অস্বস্তি দেখিয়েছে। তারা বাবার কাছে থাকতে চায়। এক সপ্তাহ করে তাদের একসঙ্গে থাকতে দিলে ভালো হয়।
এ সময় অ্যাডভোকেট শিশির মনির ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সে সময় অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সমাজ সেবা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তাকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বিষয়টি তদারকি করার প্রস্তাব দেন এবং বলেন, তারা গুলশানের বাসায় থাকতে পারেন।
তবে অ্যাডভোকেট শিশির মনির দূতাবাসের কাছে বাসা হওয়ায় আপত্তি প্রকাশ করেন। এতে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোন বাসায় থাকবে তা নিয়ে আপনাদের এত আপত্তি থাকলে আমরা কোর্ট কি গিয়ে বাসা খুঁজতে বের হবো?’
আদালত আরও জানান, বাচ্চাদের এখন যে অবস্থা হয়েছে তাতে আমাদের সবদিক বিবেচনা করতে হচ্ছে।
আইনজীবী শিশির মনির আদালতকে জানান, জাপানি নারী, তার সন্তানদের মা তাদের কাছে দুই সপ্তাহ থাকতে চান। আমরা এই সময় চাচ্ছি। প্রয়োজনে আমাদের এই সময় ভিক্ষা দিন।
জবাবে আদালত বলেন, আপাতত তারা একসঙ্গে থাকুক। এই সময়ে অবস্থাটা দেখুন। তারা সেখানে এক বাসায় থাকলে মিলেও তো যেতে পারেন। এক বাসায় থাকতে থাকতে নিজেদের মধ্যে ভালো উপলব্ধিও হতে পারে। আদালত আরও বলেন, আমরা বাচ্চাদের আর তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি।
এ সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে আদালতের আদেশ প্রার্থনা করেন। আদালত বলেন, আমাদের চাওয়া বাচ্চাদের কল্যাণ ও তারা যেন ভালো থাকে।
এরপর আদালত তার আদেশে বলেন, গুলশানস্থ ভাড়া বাসায় বাবা-মা দুই শিশুকে নিয়ে আপাতত একসঙ্গে আগামী ১৫ দিন বসবাস করবেন। এ সময় ঢাকার সমাজ সেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক পদের একজন বিষয়টি তদারকি করবেন। পাশাপাশি ডিএমপি বিভাগ তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। এ সময় যাবতীয় খরচ উভয় পক্ষ সমানভাবে বহন করবেন।
সবশেষে আদালত মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণের আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট শরীফ ইমরানের জিম্মা থেকে দুই শিশু সন্তানকে সিআইডি কর্তৃক উদ্ধারের পর আজ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়াও আজ (৩১ আগস্ট) শিশুদের হাইকোর্ট হাজির করতে এবং এ সময়ের মধ্যে আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত। শিশুদের মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এসব আদেশ দেন।
পরে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে তাদের মা পৃথক মামলা দায়ের করলে গত ২২ আগস্ট শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। এরপর তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছিল।