দুই শিশুর সাজা: আইন প্রয়োগে আরও সতর্ক হতে বললেন হাইকোর্ট
বাল্য বিয়ের ঘটনায় নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় দুই শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না। সেইসঙ্গে আইন প্রয়োগের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার। অন্যদিকে শিশুদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের পর্যবেক্ষণসহ আবেদনটি নিষ্পত্তির বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আদালত নিষ্পত্তি করে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না; ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার। সেইসঙ্গে আইন প্রয়োগের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিষ্পত্তি করবেন।
এর আগে ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া ভুল স্বীকার করে হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও অঙ্গীকার করেন।
ওই শিশুদের সাজার দেওয়ার ঘটনায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করা লিখিত ব্যাখ্যায় ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া। এর একটি কপি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
এর আগে গত ৫ আগস্ট বাল্যবিয়ের ঘটনায় দুই শিশুকে সাজা দেওয়ার বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া ব্যাখ্যার এক কপি ২৬ আগস্টের মধ্যে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করতে বলা হয়েছিল। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন।
আদালতে সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার। অন্যদিকে শিশুদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
আদালতের আদেশের বিষয়টি ওইদিন নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার কাছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাখ্যা চেয়েছেন। সেই ব্যাখ্যা হাইকোর্টে দাখিল করার নির্দেশনা চেয়েছিলাম। তখন আদালত এই আদেশ দেন।
প্রেমের সম্পর্কের জেরে পারিবারিকভাবে গত ১ আগস্ট নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার শ্রীরামপাশা গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৫ বছর) সঙ্গে সমবয়সী মহেশ্বরখিলা গ্রামের একজনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এই বিয়ের খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের আটক করে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে এক মাস করে সাজা দেন। এরপর তাদের গাজীপুর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে বুধবার (৪ আগস্ট) বাল্যবিয়ের অভিযোগে নেত্রকোনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সাজায় কারাগারে যাওয়া দুই শিশু মুক্তি পায়।