মায়ের সাথে পিতার বিচ্ছেদ হওয়ার পর প্রায় ১৮ বছর মেয়েটি সমাজের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে তার পিতৃপরিচয়ের জন্য। পিতা ১৮ বছর ধরে নানা সময়ে ভরণপোষণ ও সামাজিক মর্যাদা দেবার কথা বললেও দেননি। মাঝে কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী পিতা হতে ভরণপোষণের টাকা নিয়ে মেয়েকে দেয়নি। অসহায় মেয়েটি তীব্র মানসিক যন্ত্রণা আর পরিচয়হীনতার অনিরাপত্তায় ভুগেছে বছরের পর বছর। পিতৃকূলের কারো কাছে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি কখনো, কেউ তাকে চিনেনা। সময়ের পরিক্রমায় মেয়েটির বিয়ে হয়। এখন সে সন্তানসম্ভবা। পুরো বিষয়টি নিয়ে তার স্বামীর সাথে সে লিগ্যাল এইড অফিসে (লক্ষ্মীপুর) এসে প্রতিকার প্রার্থনা করে।
তার পিতাকে নোটিশ করা হলে তিনিও হাজির হন। মেয়েকে এভাবে দূরে রাখার কারণ তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তাকে বোঝানো হয় এ বার্ধক্যে মেয়েকে তার কেন প্রয়োজন, তার সামাজিক, মানবিক দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে সচেতন করা হয়। পাশাপাশি মামলা মোকদ্দমা হলে এর সামাজিক বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে তাকে বোঝানো হয়। মেয়েটির কাঁদছিলো আর বলছিলো সে তার পিতার সান্নিধ্য চায়, অধিকার চায়। না সে কোন সম্পদ বা অর্থ চায় না শুধু মেয়ে হিসেবে তার স্বীকৃতি এবং পিতৃকূলের সাথে আত্মীয়তা চায়, সে চায় তার পিতা তার বাসায় আসুক, সেও যেন তার পিত্রালয়ে অবাধে যেতে পারে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ, লক্ষ্মীপুর) মুহম্মদ ফাহ্দ বিন আমিন চৌধুরীর মধ্যস্থতায় কোন লিগ্যাল নোটিশ, আইনি জটিলতা, মামলা, ডিএনএ টেস্ট, অর্থব্যয় ছাড়াই মাত্র তিনটি আপস বৈঠকে এক মাসের কাছাকাছি সময়ে পিতৃত্বের স্বীকৃতির মত জটিল একটি সমস্যার সফল ও সুন্দর সমাধান হয়েছে। কন্যা ১৮ বছর পর ফিরে পেলো স্বীকৃতি, পিতা ১৮ বছর পর কন্যাকে বুকে টেনে নিলো। আপস প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কন্যা তার পিতার বাড়িতে ঘুরে এসেছে এবং চাচা সহ সবার সাথে পরিচিত হয়ে এসেছে। এভাবে বিকল্প বিরোধ পদ্ধতির মাধ্যমে মামলা ছাড়াই জটিল সমস্যার সমাধানে প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সারা দেশের লিগ্যাল এইড অফিসাররা যার ফলে বিচার বিভাগের উপর থেকে অপ্রয়োজনীয় মামলার ভার কমে যাচ্ছে।
কন্যা সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তার পক্ষে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার তার স্বামী এসেছিলেন। সঙ্গত কারণেই পক্ষদের ছবি অস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
(লক্ষ্মীপুর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের ফেইসবুক আইডি থেকে তথ্য সংগ্রহ)