ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ময়লার স্তূপ করে আগুন দিয়ে পরিবেশ দূষণের ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইন।
ফেনীর স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত “ফেনীর বিসিকে ময়লার আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে গাছ দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ” সংবাদ আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি ১৩ অক্টোবর এই আদেশ দেন।
আদালতসূত্রে জানা যায়, ফেনীর স্থানীয় দৈনিক প্রভাত আলো পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় ফেনীর অদূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ময়লার ভাগাড় হিসাবে ব্যবহারের অনুমোদন না থাকলেও এখানে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের ময়লা আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট খাবার। এতে ময়লা আবর্জনার গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আবর্জনা ময়লা ও উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলার কারণে একদিকে যেমন দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে ময়লাতে আগুন দিয়ে জ্বালানোর কারণে বড় বড় কাঠের কড়াই গাছ মারা যাচ্ছে। আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এসব গুকনো বড় বড় কড়াই গাছ এখন পথচারীসহ যাত্রীবাহী পরিবহনের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভেঙ্গে পড়তে পারে যেকোন সময় পথচারী কিংবা যানবাহনের উপর। ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। এর মধ্যে মহিপাল থেকে ফেনীর বিসিক শিল্পনগরী পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশের প্রায় বারোটি বড় কড়াই গাছ মারা গেছে। এখানে ফেলা হচ্ছে বিসিকের আবুল খায়ের গ্রুপের ম্যাচ ফ্যাক্টরির আবর্জনা, মহিপাল ফলের আড়তের আবর্জনা, চাড়িপুর বিসিকে অবস্থিত বিভিন্ন রকমের কারখানার ডিমের খোসা ও কাঁচামালের অবশিষ্ট অংশ। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পিকআপ ভ্যানে করে বস্তা ভরে এসব ময়লা আবর্জনা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। ময়লা নষ্ট করতে আবর্জনা ফেলার পর এখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে গাছের গাছের শিকড় ও ডালপালা সহ পুড়ে মারা যাচ্ছে মূল্যবান কড়াই গাছগুলো। বির্বণ হয়ে পড়েছে সবুজ বৃক্ষরাজ। বন বিভাগ নীরব দর্শকের ভূমিকে পালন করছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঘটনাস্থল বিসিক শিল্পনগরী এলাকা ও ফেনী সদর উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রকাশিত সংবাদে উল্লিখিত অভিযোগ ১৯৯৫ সনের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জনজীবনের স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত ও পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ নির্মুল করার লক্ষ্যে এই সংবাদকে আমলে নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ও অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক মর্মে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়।
এমতাবস্থায় তদন্ত করে প্রকৃত আসামীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফেনীর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও ঘটনাস্থলটি ফেনী পৌরসভা হওয়ায় ফেনী পৌরসভার মেয়রকে পরিবেশ দূষন ও ময়লা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের আদেশে আরও বলা হয়, প্রতিবেদন অনুযায়ী বেশ কিছু গাছের ক্ষতি ও পোড়া যাওয়ার পরও বন বিভাগ ফেনী কর্তৃক কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এজন্য ফেনীর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্ত কে সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক বন আইন অনুযায়ী আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। এই ঘটনা তদন্তের স্বার্থে আইনগত ও প্রশাসনিক সহায়তা দেয়ার জন্য ফেনী পৌরসভার মেয়র, ফেনী সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কে প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়।
আগামী ৩১ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ প্রনয়ণ করে পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বিচার নিশ্চিত করার জন্য স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কে ক্ষমতা প্রদান করেন।