উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সে মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন না করায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের পক্ষে দায়ের করা রিট আবেদনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৪০টি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে বিবাদী করা হয়েছে। একই সঙ্গে রিট আবেদনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের আরজি জানানো হয়েছে।
এছাড়া হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাস্তবায়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং রায় বাস্তবায়নে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না সে মর্মে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। এছাড়াও রায় বাস্তবায়নের একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করেন।
সে রিটের শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে হাইকোর্ট দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ গ্রহণের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনসহ বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে ওই রায়ের পর প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও রায়টি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই রায়টির বাস্তবায়ন চেয়ে পুনরায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলো।
২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনাটি যাতে মানা হয় সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, বর্তমান অবস্থাকে বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে আদালতের নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নোটিশ বা অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে হাইকোর্টের নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত অবহিত করবেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী ও কর্মীদের মাঝে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত আইন, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা এবং আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব হবে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে একটি তদারকি ও পর্যবেক্ষণ কৌশল গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা।
সুপারিশে আরও বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মী ও ব্যবস্থাপকের জন্য সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা, ব্যবহারিক ও প্রচারণার নথিপত্র তৈরি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদারকি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। তদারকি কৌশলগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি অধিদফতর ও কর্তৃপক্ষের সুপরিকল্পিত, সমন্বিত উদ্যোগে গ্রহণ করতে হবে।