ফেনীর সোনাগাজীতে বদর মোকাম খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে ফসলী জমির ক্ষতির ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইন।
ফেনী জেলায় প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক ফেনীর সময়, দৈনিক প্রভাত আলো, দৈনিক অজেয় বাংলা পত্রিকায় গত ২০ অক্টোবর প্রকাশিত “সোনাগাজীতে বদর মোকাম খালে অবৈধ ১০টি বাঁধ অপসারণ” “মতিগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসন, জাল অপসারণ করলেন বাবু চেয়ারম্যান” “মতিগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসনে বাবু চেয়ারম্যানের সাহসী উদ্যোগ” সংবাদসমূহ আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি এই আদেশ দেন।
আদালতসূত্রে জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর প্রকাশিত দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকায় শেষ পাতায় শিরোনাম হলো “সোনাগাজীতে বদর মোকাম খালে অবৈধ ১০টি বাঁধ অপসারণ” দৈনিক প্রভাত আলো পত্রিকায় ১ম পাতায় সংবাদ শিরোনাম হলো “মতিগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসন, জাল অপসারণ করলেন বাবু চেয়ারম্যান”। দৈনিক অজয় বাংলা পত্রিকায় শেষ পাতায় শিরোনাম হলো “মতিগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসনে বাবু চেয়ারম্যানের সাহসী উদ্যোগ” সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়। উক্ত সকল সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তর্গত স্থানীয় বদর মোকাম খাল এর উপর বেশ কিছু বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করা হয় ও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বাবু স্থানীয় জনগণ ও গ্রাম পুলিশের সহায়তায় গত ১৯ অক্টোবর ১০টি বাঁধ উচ্ছেদ পূর্বক জলাবদ্ধতা নিরসন করে খালের পানি চলাচল স্বাভাবিক করেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শ্রমিক ও গ্রাম পুলিশ নিয়ে তিনি নিজেই বদর মোকাম খালের বাঁধগুলো কেটে পরিস্কার করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয়রা বাঁধ অপসারণ কাজে অংশ নেন। কৃষক ও স্থানীয়রা জানায়, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ, পালগিরি, পানিয়ামলং ও খিচড়া এলাকায় বদর মোকাম খালে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিসহ ৮-১০ জন লোক মাছ চাষ, শিকার ও হাটাচলার জন্য খালের উপর বাঁধ দিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখেন। হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ার পর চারটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানির নীচে তলিয়ে যায় আমন ধান গাছসহ অন্যান্য ফসল। কৃষকদের অনুরোধে ইউনয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাঁধগুলো অপসারনের জন্য ওইসব ব্যক্তিকে আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু তারা এতে কোন প্রকার কর্ণপাত না করায় চেয়ারম্যান নিজে উপস্থিত থেকে শ্রমিক ও গ্রাম পুলিশ দিয়ে বাঁধগুলো কেটে খালের পানি চলাচলের উপযোগী করে দেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্থানীয় বদর মোকাম খালের মধ্যে বাঁধ থাকায় ফসলী জমির পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। উক্ত সংবাদে যে অভিযোগ তা ১৯৯৫ সনের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জনজীবনের স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত ও পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ নির্মুল করার লক্ষ্যে এই অভিযোগ আমলে নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় প্রকৃত আসামীদের চিহিৃতকরণ ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্থানীয় বদর মোকাম খালের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা ও স্বাভাবিক পানি চলাচল এবং জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনের উদ্দেশ্যে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফেনীর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও ২০১৩ সনের পানি আইন অনুসারে খাল ও নদীর স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা ও স্বাভাবিক পানি চলাচল রাখার উদ্দেশ্যে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।
এই ঘটনা তদন্তের স্বার্থে সোনাগাজী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এবং মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বাবু কে আইনগত ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়।
আগামী ৩০ নভেম্বর ধার্য তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।