জমি খারিজ করার পরও খতিয়ান থেকে ওই জমি কর্তন করা হয় না। পরে একই জমি অন্যকে খারিজ করে দেওয়া হয়। আবার কারও অনুকূলে কম জমি খারিজের পরও পরবর্তীতে রেজিস্টারে কাটাকাটি করে তার নামে বেশি জমি খারিজ দেখানো হয়। ফলে দাগের প্রকৃত পরিমাণের চাইতে বিভিন্ন জনের নামে বেশি জমি খারিজ হয়ে যায়। আর এ-নিয়ে পক্ষদের মধ্যে শুরু হয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা। উৎপত্তি ঘটে মামলা-মোকদ্দমার।
সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা এসি ল্যান্ড অফিসের এরকম অনিয়ম ধরা পড়েছে বিচারকের পরিদর্শনে। ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এক আদেশে এসি ল্যান্ড অফিসকে এ-ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন আদালত।
আদালতসূত্রে জানা যায়, গত ৬ অক্টোবর রাজশাহীর বাগমারা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মারুফ আল্লাম একটি মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখতে পান, রাজশাহীর বাগমারা থানার নুদাকান্দর মৌজার যে-দুটি দাগ নিয়ে পক্ষদের মধ্যে বিরোধ, ওই দুটি দাগে পক্ষদের মধ্যে প্রকৃত জমির চাইতে বেশি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। দেখা যায়, দাগের প্রকৃত জমির চাইতে ৪৬২ দাগে ১.৫ শতক আর ৪৬৩ দাগে ২.৫ শতক জমি অতিরিক্ত খারিজ হয়েছে। মোকদ্দমা উদ্ভবের পেছনে এই অতিরিক্ত খারিজের ভূমিকা আছে বলে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন। বাদী-বিবাদীর স্বত্বদখল নিরূপণে উক্ত খারিজসমূহ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রয়োজন উল্লেখ করে আদালত সেদিন এসি ল্যান্ডের কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করেন। একইসঙ্গে খারিজসংশ্লিষ্ট রেজিস্টারগুলোও পরিদর্শনের জন্য আদালতে তলব করা হয়।
ওই আদেশের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বাগমারার এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান লিখিত ব্যাখ্যা ও সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারগুলো আদালতে প্রেরণ করেন। বাগমারা আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ মমিন প্রামাণিক জানান, রেজিস্টারগুলো পরিদর্শনে আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোঃ আলমগীর হোসেন দেখতে পান, ৪৬৩ দাগের সম্পূর্ণ ৪ শতক জমি প্রথমে বিবাদীর নামে খারিজ করা হলেও খতিয়ান থেকে তখন তা কর্তন করা হয়নি। ফলে একই সম্পত্তি থেকে পরে আবারও ২.৫ শতক সম্পত্তি বাদীকে খারিজ করে দেয়া হয়। আবার ৪৬২ দাগের ৫ শতকের মধ্যে প্রথমে বিবাদীকে ২ শতক আর পরে অবশিষ্ট ৩ শতক বাদীকে খারিজ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এসি ল্যান্ড অফিসের রেজিস্টার অনুসারে বাদীর খারিজ ৩ শতক হলেও তহশিল অফিসের রেজিস্টারে দেখা যায়, কাটাকাটি করে সেটিকে ৪.৫ শতক করা হয়েছে।
রেজিস্টার পরিদর্শনের পর বিচারক তার আদেশে এসব অনিয়মের ব্যাপারে বলেন, খারিজ-খাজনার কাগজকে দখলের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আর স্বত্বের সমর্থক প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়। সুতরাং খারিজ খাজনার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও তদারকি প্রয়োজন। নয়তো আদালতের কাঁধে অপ্রয়োজনীয় মামলা মোকদ্দমার চাপ বাড়তেই থাকবে। এসব অনিয়ম ও জালিয়াতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের কপি ডেপুটি কমিশনার, রাজশাহী ও এসি ল্যান্ড, বাগমারা বরাবর প্রেরণ করার আদেশ দেন আদালত।