সব বিচারপ্রার্থী দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকারী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে মামলা মেডিয়েশন বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সারা দেশের ২৮০ জন বিচারককে সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠিানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস)।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘মূলত মেডিয়েশন হলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির একটি পদ্ধতি। যে পদ্ধতি কিনা আদালত-ট্রাইব্যুনালের প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে থেকে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে মেডিয়েশন পদ্ধতি খুবই গুরুত্বের অনুসরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে পঞ্চায়েত অন্যতম। পঞ্চায়তের সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগেও সমাদৃত হয়ে থাকে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মেডিয়েশন পদ্ধতে একজন মেডিয়েটরের মাধ্যমেই কোনও অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। যেখানে উভয়পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা হয়। ফলে উভয়পক্ষের সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্তের পৌঁছানো সম্ভব হয়। এটি বিচার বিভাগের ওপর থেকে মামলার চাপ নিরসনে কাজ করে এবং বিচারে সমতা নির্ণয় করে।’
তিনি বলেন, ‘মূলত মেডিয়েশন পদ্ধতির চালু হয় পক্ষগণের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদালতে মামলার চাপ ও খরচ কমিয়ে আনা এবং দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে সফলভাবে দেওয়ানি-ফৌজদারি মামলায় মেডিয়েশনের প্রয়োগ হচ্ছে। বর্তমানে নিউইয়র্কে ১০ শতাংশ দেওয়ানি মামলা বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকেও মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে। কানাডায় প্রায় ৮০ শতাংশ মামলা এভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াতেও মেডিয়েশনের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দেওয়া হয়েছে।’
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আইনজীবী, বিচারক ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে অবশ্যই মেডিয়েশনের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তিতে আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হলে তা বিচারের ব্যাপ্তিকে ক্ষুণ্ণ করে। এতে মামলার পক্ষগুলোর খরচ বেড়ে যায় এবং আদালতে মামলার জট বৃদ্ধি পেতে থাকে। একপর্যায়ে মামলার সেই জট বিচার বিভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সকল বিচারপ্রার্থী দ্রুত ও সুষ্ঠ বিচার পাওয়ার অধিকারী।’ সে ক্ষেত্রে মেডিয়েশনের প্রক্রিয়া অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি।
একইসঙ্গে মামলা নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পন্থা হিসেবে মেডিয়েশন ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক মেডিয়েশন অ্যাওয়ার্ড-প্রাপ্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটির (বিমস) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এন গোস্বামী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক প্রধান বিচারপতি গীতা মিতাল, জাতিসংঘের অম্বুডসম্যান ড. কেভিন বেরি ব্রাউন, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মোহাম্মদ নাজির, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জয়শ্রী সমাদ্দার ও বাংলাদেশ ইন্ডিয়া মেডিয়েটর্স ফোরামের চেয়ারম্যান জর্জ যিশু ফিদা ভিক্টর।
এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া, বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল।
প্রসঙ্গত, বিমস এর সহযোগিতায় কয়েক ধাপে অধস্তন আদালতের বিচারকদের মেডিয়েশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের বাছাই করা মোট ২৮০ জন বিচারক এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আহমেদ সোহেলসহ আন্তর্জাতিক মেডিয়েশন বিশেষজ্ঞরা এসব প্রশিক্ষণ দেন।