দেশের অধস্তন আদালতে মামলাজট নিরসন তথা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আনয়নে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে আট বিভাগের জন্য পৃথক আটটি সেল গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
আজ রোববার (২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যলয় কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রতিমাসে মনিটরিং সেল থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করবো। পুরাতন মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইস এবং মনিটরিং করা হবে।
সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারিক সময় ও দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রত্যেক বিচারককে মামলা নিষ্পত্তির অভূতপূর্ব অভিযাত্রায় অগ্রসেনানী হওয়ার ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
বিচার বিভাগের জন্য মামলাজট সুখকর নয় উল্লেখ করে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি মামলাজট থেকে মুক্ত হওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে অধিক পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই। এটি হবে বিচার বিভাগের জন্য মামলাজট থেকে মুক্তির যুদ্ধ।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ন্যায়বিচার জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া জনগণের প্রতি দয়া নয় বরং এটি জনগণের সহজাত অধিকার। এই অধিকারকে কেবল সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে সাব্যস্ত করতে আমি রাজিন নই। ন্যাবিচারের সৌকর্য এবং আইনের রাজকীয়তা প্রকৃতপক্ষে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন বটে। সে কারণে নিরপেক্ষতার সাথে, নির্মোহ হয়ে, নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সহজাত অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেশের সকল বিচারকের।
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ছাড়াও বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল কথা বলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সকাল ১০টা ৩৫ মিমিটে আসন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা। এর আগে থেকে কোর্টের এজলাস কক্ষ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়। পরে ১০টা ৪১ মিনিটের দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ: প্রধান বিচারপতি
এর আগে, গত ৩০ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরদিন শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে নতুন প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের পর ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৪৭ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যান তিনি। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।