গত এক বছরে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৩২১ জন, আর ধর্ষণের পর খুন হয়েছেন ৪৭ জন নারী। ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এ তথ্য জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শনিবার (১ জানুয়ারি) আসকের পক্ষে থেকে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংস্থার সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা। তিনি বলেন, ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১ হাজার ৬২৭ নারী এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪১৩ জন। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও গ্রামে গত ৯ অক্টোবর এক গৃহবধূ ও তার চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর থেকে আসামিপক্ষের লোকজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাদের হুমকি-ধমকিসহ নানাভাবে চাপ দেয়। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে গিয়ে নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথাও উল্লেখ করা হয় পর্যালোচনায়।
আসকের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ১২৮ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন ৭৭ জন পুরুষ। এক বছর উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। এ ছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারী ও পাঁচ পুরুষসহ খুন হয়েছেন আটজন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর ২০ এপ্রিল ভোর রাতে ঢাকার সাভারে ঘরের গ্রিল ভেঙে রুমে ঢুকে প্রিয়াঙ্কা সাহা নামে এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে বখাটেরা। গত এক বছরে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৪০ নারী। যার মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ৩৭২ জন এবং আত্মহত্যা করেন ১৪২ জন। আর ২০২০ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৫৫৪ নারী। অন্যদিকে ২০২১ সালে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১০ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৭২ নারী এবং আত্মহত্যা করেন ১৩ নারী।
এ ছাড়া সালিশের মাধ্যমে নির্যাতনের বিষয় তুলে ধরে আসকের সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা বলেন, ২০২১ সালে সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ১২ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে সালিশে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিন নারী এবং নির্যাতন-পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করেন দুই নারী। ২০২০ সালে সালিশ ও ফতোয়ার শিকার হয়েছিলেন ৮ নারী।
এ ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুম, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার পরিস্থিতি, মতপ্রকাশের অধিকার, নারী অধিকার, শিশু অধিকার, শ্রমিক অধিকার, রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সীমান্ত হত্যা, নির্যাতন ও গণপিটুনিসহ বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয় পর্যালোচনায়। লিখিত বক্তব্যে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরে আসক।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান লিটন। ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, এ বছর মানবাধিকার পরিস্থিতি এক কথায় সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কোনো ঘটনারই নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, পরিচালক নীনা গোস্বামী, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির।