সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেছেন, আপীল বিভাগে আইনজীবী তালিকাভুক্তিসহ অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড ও নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
আজ রোববার (২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যলয় কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
অধস্তন ও উচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক একাধিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় উল্লেখ করে সমিতির সম্পাদক বলেন, আপীল বিভাগে তালিকাভুক্তির জন্য সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম বা মানদণ্ড না থাকায় অধিকাংশ আইনজীবী তালিকাভুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন না।
গত ৩০ ডিসেম্বর আপীল বিভাগে তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্ট থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত আইনজীবীদের বেশ কয়জন বহু আগে মৃত্যুবরণ করেছেন জানিয়ে ব্যারিস্টার কাজল বলেন, এমন সিদ্ধান্তের কারণে এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ পান।
এজন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে আপীল বিভাগে আইনজীবী তালিকাভুক্তিসহ অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে সম্মাননার বিষয়টি নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার কাজল আদালতের প্রশাসনিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, জামিনাদেশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে আদেশ নামানো, আদেশ ডেসপাস করা প্রতিটি ক্ষেত্রেই অহেতুক নানাবিধ অতিরিক্ত পয়সা খরচ করতে হয়। অথচ আদালতে ফাইল আনা, ফাইল পাঠানো কিংবা আদেহ পাঠানো আইনগতভাবে আদালতেরই প্রশাসনিক দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু এ নিয়ম এমনভাবে অনিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে নবীন আইনজীবী তা ভুলতে বসেছেন আর এইসব প্রশাসনিক কাজ সংশ্লিষ্ট আইনজীবী কিংবা আইনজীবী সহকারির দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। এ কারণে প্রসাসনে নানারকম দুর্নীতি ও অনিয়ম ঘটছে।
সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, একটি মামলা এফিডেভিট করে দায়েরের পর আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে এবং আদালতের আদেশের পর আদেশ পাঠানো পর্যন্ত পদে পদে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়।
এছাড়াও কোন মামলা জামিন কিংবা স্থগিতাদেশ বৃদ্ধির জন্য সময়মত নির্দিষ্ট আদালতে ফাইল না আসা কিংবা আদেশ সময়মত বিচারিক (অধস্তন) আদালতে না পৌঁছানোর ফলে জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তির অহরহ অধস্তন আদালত কর্তৃক পুনরায় কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ঘটছে। এই সকল সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেম্বার জজ আদালতে একতরফা শুনানি হয় জানিয়ে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আপীল শুনানির পূর্বে আপীলকারী পক্ষ কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে মামলা দায়েরকারী আইনজীবীকে অবহিত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আবেদনপত্রে উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর উল্লেখিত মোবাইল নাম্বারে জানানো যায়। সমিতির পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে অবহিত করণের বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
এছাড়াও লিখিত বক্তব্যে সমিতির সম্পাদক বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি নির্মূলে সমিতির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান। এ সময় তিনি প্রশাসনিক বাধায় বন্ধ হয়ে যাওয়া আইনজীবীদের জন্য নির্মিতব্য ‘ভবন-২০২০’ -এর কাজ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে পার্কিং সমস্যা সমাধানসহ আদালতের কর্মচারীদের বেমানান অস্থায়ী টিনসেড -এর জায়গা সমিতির অনুকূলে চেয়ে বহুতল নির্মাণপূর্বক সদস্যদের পেশা পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতিকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ছাড়াও অ্যাটর্নি জেনারেল কথা বলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সকাল ১০টা ৩৫ মিমিটে আসন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা। এর আগে থেকে কোর্টের এজলাস কক্ষ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়। পরে ১০টা ৪১ মিনিটের দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এর আগে, গত ৩০ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরদিন শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে নতুন প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের পর ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৪৭ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যান তিনি। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।