হাইকোর্ট, ঢাকা ওয়াসা
হাইকোর্ট, ঢাকা ওয়াসা

আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন: ঢাকা ওয়াসার পয়ঃ শোধনাগারের লেগুন বিষাক্ত মাছমুক্ত

ঢাকা ওয়াসার পয়ঃশোধনাগারের লেগুনে মাছ চাষ বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ওয়াসার পাগলা পয়ঃশোধনাগারের লেগুন বিষাক্ত মাছমুক্ত করা হয়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ থেকে গতকাল রোববার (২ জানুয়ারি) পয়ঃ শোধনাগারের লেগুনে জাল ফেলা হলে নামমাত্র কয়েকটি মাছ পাওয়া যায়।

এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে ঢাকা ওয়াসার সায়দাবাদ পয়ঃশোধনাগারের লেগুনে মাছ চাষ বন্ধে সাত দফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। এতে লেগুন এলাকা দেয়ালে ঘিরে দেওয়ার পাশাপাশি দুই মাস পর পর মাছ নিধন করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জনগণকে সতর্ক করতে সাইন বোর্ড বসিয়ে তদারকি জোরদার করতে বলেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চের দেওয়া এক রায়ে এসব নির্দেশনা আসে।

আদালতের সাত দফা নির্দেশনাগুলো নিম্নরূপ –

১. ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে দুই বছরের মধ্যে লেগুন এলাকার চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে।

২. ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দুই মাস পর পর ওষুধ প্রয়োগ করে লেগুনের মাছ নিধন করতে হবে।

৩. লেগুন এলাকায় তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতে হবে।

৪. লেগুন এলাকায় নৈশ টহল জোরদার করতে হবে।

৫. জনসচেতনতার জন্য ‘এই মাছ বিষাক্ত, ক্ষতিকর এবং মাছ চাষ ও ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ লেখা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে লেগুন এলাকায়।

৬. ওয়াসা কর্তৃপক্ষ লেগুন এলাকার প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে।

৭. ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নাগরিক কমিটি গঠন করে মাছ চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেবেন এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।

পর্যায়ক্রমে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার কারণে বাহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে মাছ চাষ।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, লেগুনে রোটেনন প্রয়োগ ও মাছ ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াসা। ২০২০ সালে পাগলা পয়ঃ শোধনাগার থেকে দুই মণ মাছ পাওয়া গেলেও এবার তার পরিমাণ কমে এসেছে। রবিবার সকালে প্রথমে একটি লেগুনে জাল ফেলা হলে সেখান থেকে উঠে আসে মাত্র ছয়টি ছোট টাকি মাছ।

প্রেক্ষাপট

২০১১ সালের ১৩ জুলাই ‘ওয়াসার লেগুনের বিষাক্ত মাছ খাচ্ছে ঢাকার মানুষ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই বছরই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে দুই আইনজীবী এই রিট আবেদন করেন।

প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছর ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলের ওপর ৫ কার্যদিবস শুনানি শেষে চলতি বছরের ৩০ অগাস্ট হাই কোর্ট বিষয়টি রায়ের জন্য রাখে। সে অনুযায়ী রোববার আদালত রুল মঞ্জুর করে এই সাতদফা নির্দেশনাসহ রায় দেয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুন নেসা ও সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন জাহানারা শিলা।

রিট পক্ষের মনজিল মোরসেদ সে সময় জানান, সায়দাবাদ-পাগলা-কদমতলী এলাকায় পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের জন্য ওয়াসার ২৪৬ একর জমিতে ওয়াসার বেশ কিছু লেগুন বা পুকুর রয়েছে।

ঢাকা শহরের বর্জ্যের সঙ্গে মিশে আসা অ্যালুমেনিয়াম, লেড, পারদ ও দস্তাসহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এসব লেগুন মাছ চাষের অনুপযুক্ত হলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লেগুনে মাছ চাষ করে তা রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে আসছিলেন।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এসব লেগুনে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মাছ নিধন শুরু হয়। কিন্তু তারপরও লেগুনে মাছ চাষ বন্ধ না হওয়ায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ আদালতে আসে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা ওয়াসার পাগলা পয়ঃ পরিশোধনের আকার প্রায় ২৪৬ একর। এর মধ্যে রয়েছে ১৬টি লেগুন বা পুকুর। প্রতিটি লেগুনের আকার গড়ে ২৫ হাজার বর্গমিটার। বিশাল আয়তনের এই লেগুনে চাষ করা হতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পয়ঃবর্জ্যের পানিতে মাছ চাষ করে তা আবার রাতের আঁধারে বাজারজাত করা হতো। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা এই বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।