এখন থেকে একটি নম্বরে ফোন করে ঘরে বসে দেওয়া যাবে ভূমি উন্নয়ন কর। ফোন করে জমির খতিয়ান বা ম্যাপও পাওয়া যাবে ডাকযোগে। আর ভূমিসংক্রান্ত কোনো তথ্য বা অভিযোগও জানানো যাবে ফোন করেই। ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে এসব সুবিধা পাওয়া যাবে।
আজ বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভূমি ভবনে ‘কল সেন্টারের মাধ্যমে ভূমিসেবা, ডাকযোগে ভূমিসেবা ও ভূমিসেবা ই-পেমেন্টের কার্যক্রম’ উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি যেখানে যাই সেখানে পরিবর্তন করার চেষ্টা করি। আমি গতানুগতিক কাজে বিশ্বাস করি না। সময়ের দাম না দিলে, সময় আমার জন্য বসে থাকবে না। একটি সময় ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়ে দেশে নেতিবাচক ধারণা ছিল। মানুষ বলতো, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ নেই, এটা একটা অকার্যকর মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী বলেন, আমার এই মন্ত্রণালয় নিয়ে এখন ভালো লাগছে। একটা পর্যায়ে এসেছে মন্ত্রণালয়টি। এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইমেজ সঙ্কটে ভুগেছেন বহুদিন। অন্য সব মন্ত্রণালয়ের অকার্যকর কর্মকর্তাদের এই মন্ত্রণালয় ডাম্প করা হতো। মনে করা হতো এটা একটা ডাম্পিং মিনিস্ট্রি। আমি এই ভাবনা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি। এটা এখন এখন ডায়নামিক মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি (এমপি) মো. মকবুল হোসেন, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আব্দুর রউফ তালুকদার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. জাহিদ হোসেন পনির প্রমুখ।
ঘরে বসে ভূমি কর
ভূমি কর এখন ঘরে বসে দেওয়া যাবে। এ জন্য ১৬১২২ নম্বরে ফোন করতে হবে। ফোন করার পর একজন ব্যক্তি তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করবেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস ওই তথ্য পাবে। ভূমি অফিস ব্যক্তির হোল্ডিংয়ের এন্ট্রি করে ওই আবেদন অনুমোদন করবে। তারপর হোল্ডিং নম্বরের তথ্য ব্যক্তি পাবেন। এরপর আবেদনকারী ব্যক্তি আবার ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে হোল্ডিংয়ের তথ্য দেবেন। কল সেন্টার থেকেই আবেদনকারী এরপর তাঁর মুঠোফোনে এসএমএস বা খুদে বার্তা পাবেন। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টোকেন নম্বর দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যাবে। কর পরিশোধের ৭২ ঘণ্টা পর ডিজিটাল দাখিলা আবেদনকারী ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তবে ১৬১২২ নম্বরে ফোন করার জন্য চার্জ প্রযোজ্য হবে।
শুধু ফোন করেই নয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের পোর্টাল land.gov.bd–এ আবেদন করেও ভূমিকর দেওয়া যাবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিকাশ, নগদ ও উপায়–এর মাধ্যমে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। ডাচ বাংলা ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও কর দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ‘অনলাইন সরকারি পরিষেবা ‘এ্যাপে’র যে ৩৪টি পরিষেবা আছে, তার মাধ্যমেও এ বিল পরিশোধ করা যাবে।
ডাকযোগে পর্চা
ডাকযোগে পর্চা পেতেও ১৬১২২ প্রথমে ফোন করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রসহ জমির তথ্য দিতে হবে। কল সেন্টারের মাধ্যমে আবেদন করার পর আবেদনকারী তাঁর মুঠোফোনে টোকেন নম্বর পাবেন। ওই নম্বর ব্যবহার করে মুঠোফোনের মাধ্যমে ফি দেবেন আবেদনকারী। সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে কোর্ট ফি দিতে হবে ৫০ টাকা আর ডাকযোগে এই কপি পেতে অতিরিক্ত দিতে হবে ৪০ টাকা। কবে ওই ব্যক্তি কবে পর্চা নিজের নামে পাবেন, সেই তারিখ তাঁর মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরে ডাক বিভাগের মাধ্যমে পর্চা আবেদনকারীর হাতে এসে পৌঁছাবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আবেদন ফরম পূরণ করতে কারও সহায়তা চাইলে, ই–নামজারির হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইলে বা এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ জানাতেও ১৬১২২ নম্বরে ফোন করা যাবে। আবার land.gov.bd–এ ঢুকেও আবেদন করা যাবে।
উল্লেখ্য, করোনাকালেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ভূমির নানা পরিষেবা ডিজিটালাইজড করা শুরু হয়। এর মধ্যে ই–নামজারি বিপুল সাড়া ফেলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২২ লাখ ই-নামজারি আবেদনের মধ্যে ১৯ লাখ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে পাওয়া ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৪টি আবেদনের মধ্যে ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯টি আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে।