বিচার বিভাগে হানা দিয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাস। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতের ১৭ জন বিচারক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ বুধবার (১২ জানুয়ারি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোর্ট প্রশাসনের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিচারপতিদের নাম প্রকাশে অপারগতা জানান।
সম্প্রতি আপীল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান শপথ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। করোনা আক্রান্ত হয়ে এই বিচারপতি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রে বড় ছেলের কাছে অবকাশযাপনে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হন তিনি।
এদিকে করোনার ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। আগামী রোববার (১৬ জানুয়ারি) থেকে এটি কার্যকর হবে।
আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহে চারদিন (রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার) দুপুর আড়াইটা থেকে চেম্বার জজ আদালতের বিচারিক কাজ পরিচালিত হবে। শুধু তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আপীল বিভাগের মামলা সংক্রান্ত জরুরি বিষয়াদির শুনানি গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। যা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হবে। গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় ভার্চ্যুয়ালি এবং ক্ষেত্র বিশেষে শারীরিক উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম চলে আসছিল। এর মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
অধস্তন আদালতেও করোনার থাবা
চট্টগ্রাম আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনসহ তিন বিচারক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত অন্য দু’জন হলেন- দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. সরোয়ার আলম এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মাইন উদ্দিন।
প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জেলা জজ মো. ইসমাইল হোসেন সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মাইন উদ্দিন এবং দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. সরোয়ার আলম করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সবাই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়া সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির পাঠাগার সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন।