অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুই মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের জামিন চেয়ে করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি নিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রফিকুল আমীনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
এর আগে, ২০২০ সালের ২০ আগস্ট দুই মামলায় জামিন আবেদন খারিজ করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ দুই মামলা বিচারিক আদালতে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে জামিন চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রফিকুল আমীন। ওই আবেদন ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে রিভিউ চেয়ে ফের জামিন আবেদন করেন রফিকুল আমীন। কিন্তু সেই রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই কলাবাগান থানায় অর্থপাচারের অভিযোগে দু’টি মামলা হয়। দুদকের করা এসব মামলায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ থেকে অর্থ অন্যত্র স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় অভিযোগ
২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। যার মধ্যে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। আর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রকল্পের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ডেসটিনি। সেখান থেকে এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। এতে সাড়ে আট লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
শর্ত ভঙ্গে জামিন খারিজ
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে দুই মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ শর্তসাপেক্ষে রফিকুল আমীনকে জামিন দেন। যেখানে শর্ত দেওয়া হয় যে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের গাছ বিক্রি করে ২৮০০ কোটি টাকা অথবা অন্য কোনোভাবে ২৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু শর্ত পূরণ করতে না পারায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের জামিন আটকে যায় এবং তাকে কারাগারেই থাকতে হয়।
এরপরও হাইকোর্টে কয়েক দফা জামিন আবেদন করে ব্যর্থ হন রফিকুল আমীন। একপর্যায়ে অর্থ পাচারের দুই মামলায় রফিকুল আমীনের জামিন আবেদন হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে ছয় মাসের মধ্যে মামলা দুটি নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করলে আবদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। অবশেষে সে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) করলে তা আজ খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।