শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। নোটিশে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের ‘পলাশতলী মহাবিদ্যালয়’ ঘেঁষে স্থাপিত ‘মিতালি ইটভাটা’ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পক্ষে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সংশ্লিষ্টদের নোটিশটি প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কিউ এম সোহেল রানা।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি), সখীপুরের থানা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং টাঙ্গাইলের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। যদি কেউ এ ধরণের কাজ করে থাকেন তবে পরিবেশ আইন অনুযায়ী তিনি শাস্তিযোগ্য হবেন।
এছাড়া শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ -এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ইট ভাটায় সৃষ্ট শব্দ দূষণে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নানাবিধ শারীরিক, মানসিক ও স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছেন। কেননা ইটভাটায় ব্যবহত যন্ত্র উচ্চমাত্রার শব্দ তৈরি করে যা শরীর এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
পাশাপাশি জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ব্যাহত/বিপন্ন করতে পারে এমন কোনো কারখানা/প্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকট স্থাপন করা যাবে না।
অথচ এসব বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ পার্শবর্তী এলাকার জনগণের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
এতে পলাশতলী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পার্শ্ববর্তী জনগণ সংবিধানের ১৮(এ), ২১(২), ৩১, ৩২, ৩৬ এবং ৪০ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত অধিকারবঞ্চিত হয়েছে।
এমতাবস্থায়, নিয়মনীতি না মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অবৈধভাবে ইট ভাটা স্থাপনে জড়িতদের খুঁজে বের করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে নোটিশে। সেই সাথে পরিবেশ দূষণের কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ইট ভাটা পার্শ্ববর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের ‘পলাশতলী মহাবিদ্যালয়’ ঘেঁষে অবৈধভাবে ‘মিতালি ইটভাটা’ স্থাপন সংক্রান্ত একটি অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও ট্রাকসহ বিভিন্ন যন্ত্রের বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত কলেজে আসছেন না। এতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নিয়মনীতি না মেনে স্থানীয় কয়েকজন ‘মিতালি ইটভাটা’ তৈরি করেছে। ভাটাটি এই মুহূর্তে বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভাটার কালো ধোঁয়া, ধুলাবালি ও ট্রাকসহ অন্যান্য যন্ত্রের বিকট শব্দে ক্লাস করা যায় না। ক্লাসে বসলে মাথা ব্যথা করে। আবার শ্বাসকষ্ট ও চোখ জ্বলে। বিকট শব্দে স্যারদের কথাও শোনা যায় না।